পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কলিকাতার সি আই ডি বিভাগ আমাকে জানিয়েছে যে, এরকম কোনও বই তাদের কাছে পাঠানো হয়নি। বইটি সত্যই হারিয়ে গিয়ে থাকলে দুঃখের ব্যাপার হবে।

 যদিও এখানকার আবহাওয়া আমাকে খুশী করতে পারেনি তবু অনেকটা যেন আরাম বোধ হচ্ছে। যে সব জটিল প্রশ্নের উত্তর এতদিন খুঁজে পাইনি সেগুলোরও সমাধানের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আমাদের জীবনের নানা সমস্যার সমাধানের জন্য যে নিরাসক্ত মনোভাব গড়ে তোলা প্রয়োজন, এই নির্জ্জনতা ও প্রবাসজীবনের ফলে তা আমি পেয়েছি, এজন্য কৃতজ্ঞ বোধ না করে পারছি না। যদি আমার শরীর সুস্থ থাকত তাহলে যে নির্ব্বাসন আমাকে বাধ্য হয়ে ভোগ করতে হচ্ছে তার দ্বারা আরও অনেক কিছু লাভ হত। তবে যে রকম বোঝা যাচ্ছে তাতে মনে হয় আমাকে দীর্ঘকাল এখন এখানেই থাকতে হবে।

 নানা দিক থেকে বর্ম্মা এক আশ্চর্য্য দেশ; এবং এখানকার জীবন ও সংস্কৃতি পর্য্যালোচনার ফলে অনেক নূতন অভিজ্ঞতাও লাভ করেছি। কিছু কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি এদের আছে—তবু আমার মনে হয় বর্ম্মীরা চীনাদের মতই সামাজিক দিক থেকে অনেক অগ্রসর। তবে যেটা এদের একান্ত অভাব তা হল কর্ম্মশক্তির প্রেরণা, Bergson যাকে বলতেন ‘elan vital'—অর্থাৎ সব বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে প্রগতির পথে ছুটে চলার যে প্রচণ্ড আবেগ তা এদের নেই। এখানকার সমাজে গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ ঘটেছে, শুধু তাই নয় ইউরোপের যে কোনও দেশ অপেক্ষা এখানে স্ত্রীস্বাধীনতাও অনেক বেশী। কিন্তু হায়! প্রকৃতির বৈচিত্র্যহীনতাই বোধ হয় সব উৎসাহ কেড়ে নিয়েছে এদের। সুদূর অতীত কাল থেকে বিরলবসতি এই দেশে প্রচুর শস্য জন্মানোর ফলে এদের জীবনযাত্রা সহজ হয়ে পড়েছিল, যার অবশ্যম্ভাবী ফল দেহ ও মনের দিক থেকে এরা সবাই অলস হয়ে উঠেছে। এ সম্বন্ধে আমার মনে

১৭৮