পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বন্ধুর ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে পরিচিত হয়েছিলাম বলেই তাঁর প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধাভক্তি, ভালবাসা জন্মেছিল— দেশনেতারূপে তাঁর অনুগামী ছিলাম বলে নয়। তাঁর বেশীর ভাগ ভক্তেরও ঠিক আমার মতই হয়েছিল। বস্তুতঃ তাঁর সহকর্ম্মী ও অনুচর ছাড়া তাঁর অন্য কোন পরিজন ছিল না বললেই হয়। আমি তাঁর সঙ্গে জেলে আটমাস একসঙ্গে ছিলাম—দু’মাস পাশাপাশি ঘরে, আর ছ’মাস একই ঘরে। এইরূপে তাঁকে সম্পূর্ণ ঘনিষ্ঠভাবে জানবার সুযোগ পেয়েছিলাম,—তাইত তাঁর পদতলে আশ্রয় নিয়েছিলাম।

 তুমি শ্রী অরবিন্দ সম্বন্ধে যা লিখেছ, তার সবটা না হলেও বেশীর ভাগই আমি মানি। তিনি ধ্যানী— আর আমার মনে হয়, বিবেকানন্দের চেয়েও গভীর, যদিও বিবেকানন্দের প্রতি আমার শ্রদ্ধা প্রগাঢ়। আমিও তোমার কথায় সায় দিই যে, “নীরব ভাবনা, কর্ম্মবিহীন বিজন সাধনা” সময়ে সময়ে দরকার হয়, এমন কি দীর্ঘ কালের জন্যেও। কিন্তু আশঙ্কা এই যে, সমাজের বা দেশের জীবনস্রোত থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলে মানুষের কর্ম্মের দিকটা পঙ্গু হয়ে যেতে পারে, আর তার প্রতিভার একপেশে বিকাশের ফলে সে সমাজবিচ্ছিন্ন অতিমানুষের মতন কিছু একটা হয়ে উঠতে পারে। অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন দু’চার জন প্রকৃত সাধকের কথা অবশ্য আলাদা, কিন্তু বেশীর ভাগ লোকের কর্ম্ম বা লোকহিতই সাধনার একটা প্রধান অঙ্গ। নানা কারণে আমাদের জাতির কর্ম্মের দিকটা শূন্য হয়ে এসেছে, তাই এখন আমাদের দরকার রজোগুণের “double dose”। সাধক বা তাদের শিষ্যদের মধ্যে অতিরিক্ত চিন্তার ফলে ইচ্ছাশক্তি অসাড় যদি না হয়ে যায়, তা হলে নির্জ্জনে ধ্যান যতদিনের জন্যে তারা করে করুক, আমি তাদের সঙ্গে ঝগড়া করতে যাব না। কিন্তু আমার যেন “sicklied oer with the pale cast of thought” না হয়ে পড়ি। সাধক নিজে হয়ত নিস্তেজকারী সকল প্রভাব এড়িয়ে চলতে পারে,— কিন্তু তার

১৮৫