পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এখানকার খবর অবশ্য জানতে চান। মুরগীর সংখ্যা বেড়েছে। চারটী ছানা হয়েছে। আরও কয়েকটা হয়েছিল—জন্মাবার পর মারা যায়। মুরগীর জন্য বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে রীতিমত একটা ঘর তৈয়ারী করা হয়েছে। আর নূতন মোরগও কেনা হয়েছে। মধ্যে মধ্যে মোরগের লড়াই হয়। পূর্ব্বে আমি কখনও মোরগের লড়াই দেখি নাই। পায়রা পোষবার প্রস্তাব হয়েছিল—রাখবার ঘরের অভাবের দরুন কেনা হয় নাই। তবে এখানে বেশীদিন থাকলে যে একটা পায়রার আড্ডা করা হবে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই। জেলের মধ্যে জীবনটা এত একঘেয়ে এবং নীরস যে এর মধ্যে রসের সৃষ্টি না করতে পারলে মাথা ঠিক রাখা কষ্টকর ব্যাপার।

 বেরালের উপদ্রব পূর্ব্ববৎ চলেছে। পূর্ব্বে ৮।৯টা ছিল। প্রত্যহ রাত্রে হুলো বেরালদের ঝগড়ায় ঘুম ভেঙ্গে যেতো। আমাদের তর্জ্জনগর্জ্জন তারা গ্রাহ্য করত না—কারণ তারা বুঝতে পারত যে আমরা ঘরের মধ্যে বন্ধ। তারপর একদিন আমরা সব কটাকে বস্তা বন্ধ করে দূরদেশে পাঠিয়ে দিই। তার মধ্যে কয়েকটা আবার ফিরে আসে। এখন দাঁড়িয়েছে তিনটা। এদেরও মধ্যে বিদায় করা হয়, আবার ফিরে আসে। এখানে অনেকে খুব বেরালপ্রেমিক। কি করবে— আদর করার বস্তুর অভাবে শেষে বেরালকে আদর ক’রে মনের আশা মেটায়। আমি কিন্তু এখনও বেরাল ভালবাসতে পারলুম না—(আর এগুলো দেখতে এত বিশ্রী)—তবে সারদার বেরালের মত সুন্দর হয় তো ভালবাসা যায়।

 বাগান করবার চেষ্টা খুব চলেছে। আমাদের স্থায়ী ম্যানেজার এখন ম্যানেজারী কাজ ছেড়ে বাগানের পেছনে লেগেছেন। কিন্তু জমি রাজী নয় সোনা ফলাতে। ম্যানেজার বাবুও নাছোড়বান্দা। দুই হাত জমির মধ্যে এমন কিছুই নাই তিনি লাগান নাই। শাক, বেগুন, ছোলা, মটর, আখ, আনারস, প্যাঁজ কত কি? তা ছাড়া নানা রকমের ফুলের গাছ। খানিকটা জায়গায় রোদ লাগে না বলে

২১০