পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আপত্তি করা হবে। তাই অনেক চিন্তার পর দরখাস্ত করার প্রস্তাব মন থেকে দূর করেছি।

 আপনার শরীর অত্যন্ত দুর্ব্বল এবং স্বাস্থ্য খুব খারাপ শুনে খুব চিন্তিত হয়েছি। কি করি আমরা এত নিঃসহায় যে কিছুই করিতে পারি না। আমাদের কপালে যে কি আছে তাহাও জানি না। কত কথা বলতে ইচ্ছা করে—কত কথা বলবার আছে— কিন্তু বলবার সময় এখনও আসে নাই। এ পত্রও অনেক দ্বিধার পর লিখতে বসেছি—কারণ এ পত্র অন্যের হাত দিয়ে যাবে।

 খবর-কাগজে কংগ্রেসের নিকট আপনার বাণী পাঠ করলুম। ঐ করুণামাখা Pathos-পরিপূর্ণ কথাগুলি আমার হৃদয়তন্ত্রীকে কি ভাবে আঘাত করেছে তা বলতে পারি না। নিজের পর্ব্বতপ্রমাণ বিপদ ও দুঃখরাশি পায়ে ঠেলে যিনি পরের জন্য কাঁদেন তার প্রতি লোকে কৃতজ্ঞ না হয়ে পারে না। অপর কেহ যদি ঐ বাণী পাঠাতেন তা হলেও আমি কৃতজ্ঞ হতুম এবং কৃতজ্ঞতা জানাতুম—কিন্তু এক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রয়োজন নাই, কারণ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মত সম্বন্ধ এ নয়। এত বড় হৃদয়ের পরিচয় না পেলে আপনার দেশবাসী আপনাকে “মা” বলে সম্বোধন করবে কেন? যাঁকে মা বলা হয়, তাঁহাকে কি কৃতজ্ঞতা জানান যায়? মার প্রাণ যদি সন্তানের জন্য না কাঁদে, তবে কার প্রাণ কাঁদবে? কৃতজ্ঞতা জানালে কি মাতা-সন্তানের পবিত্র সম্বন্ধক অপমান করা হয় না? আশা করি আপনার সকল শোক ও বিপদের মধ্যে আপনি ভুলবেন না বাঙ্গলার কত সন্তান আপনাকে “মা” বলে থাকে। হয়তো এ কথা মনে পড়লে আপনি কিছু সান্ত্বনা পেতে পারেন। তারা নিঃস্ব ও নিঃসহায় হলেও, আপনার বিপদকে তারা নিজেদের বিপদ বলে মনে করে নিয়েছে।

 আজ আপনার ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা আপনার দেশবাসীকে—— আমাদের সকলকে—ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দিচ্ছে। আপনি

২১৫