পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পড়া শিখিয়াও যদি কেহ হীনচরিত্র হয় তবে তাহাকে কি পণ্ডিত বলিব? কখনই না। আর যদি কেহ মূর্খ হইয়াও বিবেকাধীন হইয়া চলিতে পারে এবং ভগবদ্‌বিশ্বাসী ও ভগবৎ প্রেমিক হইতে পারে তবে তাহাকে বলিব মহাপণ্ডিত। দুই চার কথা শিখিলেই কি জ্ঞানী হয়—প্রকৃত জ্ঞান—ঈশ্বরজ্ঞান। আর সমস্ত জ্ঞান—অজ্ঞান। আমি বিদ্বান বা পণ্ডিতকে শ্রদ্ধা করিতে চাহি না! ভগবানের নাম স্মরণে যাহার চক্ষু দিয়া প্রেম বিগলিত হয় আমি তাহাকে দেবতা বলিয়া পূজা করি। মেথর হইলেও আমি তাহার পদরেণু বক্ষে ধারণ করিতে চাহি। আর একবার “দুর্গা” বা একবার “হরি” বলিলে যাহার ঘর্ম্ম, অশ্রুত্যাগ, রোমাঞ্চ প্রভৃতি সাত্ত্বিক লক্ষণ আবির্ভূত হয়, তাহার ত কথাই নাই—সে স্বয়ং ভগবান্। তাঁহাদের পাদস্পর্শে পৃথিবী পবিত্র হইয়াছে— আমরা ত অতি সামান্য তুচ্ছ জিনিষ।

 আমরা বৃথা “ধন” “ধন” বলিয়া হাহাকার করি, একবারও ভাবি না, প্রকৃত ধনী কে? যাহার ভগবৎ প্রেম, ভগবদ্ভক্তি প্রভৃতি ধন আছে জগতে সেই ত ধনী। তাহার তুলনায় মহারাজাধিরাজরাও দীন ভিখারী। এরূপ অমূল্যধন হারাইয়াও আমরা যে জীবিত আছি—ইহা বড় আশ্চর্যের বিষয়।

 আমরা “পরীক্ষা আসিতেছে” বলিয়া ব্যস্ত হই কিন্তু একবারও ভাবিয়া দেখি না যে জীবনের প্রতি মুহূর্ত্তে পরীক্ষা চলিতেছে। সে পরীক্ষা ঈশ্বরের নিকট, ধর্ম্মের নিকট। লেখাপড়ার পরীক্ষা কি সামান্য পরীক্ষা—তাহ দুইদিনের জন্য। কিন্তু সে সব পরীক্ষা অনন্তকালের জন্য। তাহার ফল জন্মে ২ ভোগ করিতে হইবে।

 ভগবানের শ্রীচরণে জীবন সমর্পণ করিয়া যিনি আপনার জীবনতরী ভাসাইতে পারেন, তিনিই ধন্য, তাঁহার জীবন সার্থক, তাঁহার মানবজন্ম সফল। কিন্তু হায়! আমরা এ মহাসত্য বুঝিয়াও