পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কাটতে পারে। আসাম অঞ্চলে একটা রীতি প্রচলিত আছে যে বিবাহের সময় কন্যার পক্ষে খুব ভাল সূতা কাটা জানা চাই—আমাদের মধ্যে যেমন এক সময় খুব ভাল রান্না জানার প্রথা ছিল। গোরা, অরুণা প্রভৃতি কেন সূতা কাটে না? তারা অবসর নিশ্চয় যথেষ্ট পায়। আমার মনে হয় যে একবার যদি নিজের হাতে কাটা সূতার কাপড় কেহ চোখে দেখে তা হ’লে তার সূতা কাটার উৎসাহ খুব বেড়ে যাবে। নিজের হাতের রান্না যেমন মিষ্টি লাগবেই লাগবে—নিজের হাতে কাটা সূতার জামাকাপড়ও সেরূপ ভাল লাগবেই লাগবে।

 ভগবানের ইচ্ছায় আজকাল আমার প্রায় প্রত্যেকটি চিঠির কয়েক লাইন কাটা হয়ে তার গন্তব্য স্থানে পৌঁছায়। তার অর্থ বোধ হয় আপনারা বুঝতে পারেন।

 আপনার চিঠি পাবার পূর্ব্বেই এখানে পায়রার আড্ডা হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশতঃ এর মধ্যে একটি পায়রা এর মধ্যেই একটা হুলো বেরালের উদরস্থ হয়েছে। এখানে, কোর্ট বসিয়ে বেরালের বিচার করা হ’ল। খাবার দিয়ে রাত্রে ফাঁদ পেতে বেরালকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে কথা উঠে যে বেরালের ফাঁসি হওয়া উচিত। কারণ মানুষ হত্যা করলে জেলখানায় মানুষের ফাঁসি হয়ে থাকে। তার পর কথা উঠে যে ফাঁসি দিয়ে যখন কাহারও কোনও লাভের সম্ভাবনা নাই, তখন বেরাল ভোজনের ব্যবস্থা করা উচিত। এদেশে কতকগুলো লোক অভাবে পড়লে বেরাল খেতে আপত্তি করে না—সেরূপ কয়েদী জেলের মধ্যে আছে। জেলখানায় কয়েদীদের পক্ষে যখন মৎস্য-মাংস দুষ্প্রাপ্য, তখন তাহারা একটা বেরাল পেলে রান্না করে খেতে প্রস্তুত হতে পারে—এরূপ প্রস্তাব একজন ভদ্রলোক করলেন। সর্ব্বশেষে হঠাৎ সকলের মধ্যে বৈষ্ণব ভাব জেগে উঠল এবং বেরালকে বস্তায় বন্ধ করে বনবাসে পাঠাবার হুকুম জারি করা হয়ে গেল।

২২৭