পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিছুই স্থির করিতে পারি নাই। দেখিতে বড় ইচ্ছা হয়—কিন্তু সে সাধ পূর্ণ হইবার নয়। জীবনে কখনও হইবে কিনা—তাহা জানি না। আমরা তো এখানে Permanent Settlement-এর জন্য প্রস্তুত। জননী, বঙ্গজননী, বিশ্বজননী—এ সব অত্যন্ত আপনার জিনিষ কারার বন্ধনের মধ্যে আমাদের নিকট সহস্র গুণে পবিত্র, সুন্দর ও প্রিয় হইয়া উঠিয়াছে ও উঠিবে। মানস জগতে তাঁহারা নিত্য বিরাজ করিতেছেন ও করিবেন কিন্তু তাঁহাদের মানস সত্তা বাস্তব জগতের বিচ্ছেদকে আরও তীব্র কবিয়া তুলিবে।

 আকাশের তারার ন্যায় পুণ্য ও মহিমান্বিত সেই সব মুক্তির দিকে মানস জগতে চাহিয়া চাহিয়া কত দিন, কত মাস, কত বৎসর কাটাইতে হইবে তাহার ইয়ত্তা নাই। তথাপি আমি বিশ্বাস করি যে মানুষের আত্মা সত্য, তার জীবন সত্য এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্বন্ধ সত্য। এ জীবনের শেষ হইলেও জীবনের শেষ নাই—জীবনের সম্বন্ধগুলিরও শেষ নাই। পার্থিব শক্তি অমাদিগকে কারারুদ্ধ করিতে পারে, সর্ব্বস্ব অপহরণ করিতে পারে কিন্তু জীবনের শেষ করিতে পারে না—জীবনের নিত্য পবিত্র সম্বন্ধগুলির উপর হস্তক্ষেপ করিতে পারে না। আমাদের গৌরবময় ভবিষ্যতের কল্পনায় ও ধ্যানে আমরা বর্ত্তমানের সকল দুঃখ ও বন্ধন অগ্রাহ্য করিতে সমর্থ ও প্রস্তুত। ভবিষ্যৎ আলোর দর্শনে আমরা বর্ত্তমানের নিবিড় অন্ধকার সহ্য করিতেছি। তাই নিতান্ত অসহায় হইলেও আমরা সুস্থির ভাবে সেই সুপ্রভাতের জন্য অপেক্ষা করিয়া আছি।

 জগতের মূলে যে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এ কথা অগ্রাহ্য করিতে পারি না। তাই আমি বিশ্বাস করি যে আমাদেরও একদিন আসিবে। তখন আমরা বর্ত্তমান শূন্যতা ও অভাবের শোধ কড়ায় গণ্ডায় তুলিয়া লইব। এই বিশ্বাস আছে বলিয়া আমরা বাস্তবের চাপে নিষ্পেষিত হই নাই বা হইব না।

২৪৭