পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাঁহাকে একবারও প্রাণ খুলিয়া ডাকি না। আমরা সংসারের ছার বস্ত লইয়া কত অশ্রুত্যাগ করি কিন্তু একবারও তাঁহার উদ্দেশে একবিন্দুও অশ্রু ফেলি না—মা, আমরা যে পশু অপেক্ষাও অকৃতজ্ঞ ও কঠিনহৃদয়। ধিক্ সেই শিক্ষা—যাহাতে ঈশ্বরের নাম নাই—নিষ্ফল তাহার মানব জন্ম যাহার মুখে ঈশ্বরের নাম শুনিতে পাওয়া যায় না! লোকে তৃষ্ণার্ত্ত হইলে পুষ্করিণী বা নদীর জল পান করিয়া তৃষ্ণা নিবারণ করে, কিন্তু তাহাতে কি মানসিক তৃষ্ণা মেটে? কখনই না— মানসিক তৃষ্ণর নিবৃত্তি কখনও হয় না। এই জন্যই আমাদের শাস্ত্রকারগণ বলিয়া গিয়াছেন:

“ভজ গোবিন্দং, ভজ গোবিন্দং, ভজ গোবিন্দং মূড়মতে।”

ভগবান কলিযুগে একটি নূতন সৃষ্টি করিয়াছেন—যাহা অন্য কোনও যুগে ছিল না। সেই নূতন—“বাবু”-সৃষ্টি। আমরাই সেই “বাবু” সম্প্রদায়ভুক্ত। আমাদের ঈশ্বরদত্ত পদযান আছে কিন্তু আমরা ২০।২২ ক্রোশ হাঁটিয়া যাইতে পারি না—কারণ অমবা বাবু। আমাদের দুইটি অমূল্য হস্ত আছে—কিন্তু আমরা শারীরিক পরিশ্রমে কুণ্ঠিত হই—আমরা হস্তের উপযুক্ত ব্যবহার করি না—কারণ আমরা “বাবু”। আমাদের এই ঈশ্বরদত্ত সবল দেহ আছে কিন্তু আমরা শারীরিক পরিশ্রমকে “ছোটলোকের কাজ” বলিয়া ঘৃণা করি কারণ আমরা “বাবুলোক”। আমরা সব কাজে চাকরকে হাঁক মারি—আমাদের হাত পা চালাইতে যে কষ্ট হয়— কারণ আমরা যে “বাবু”। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে জন্মিলেও আমরা গ্রীষ্ম সহ্য করিতে পারি না কারণ আমরা “বাবু”। আমরা সামান্য শীতকে এত ভয় করি যে সর্ব্বাঙ্গ বোঝায় চাপাইয়া রাখি কারণ আমরা “বাবু”। আমরা সর্ব্বত্র “বাবু” বলিয়া পরিচয় দিই কারণ আমরা “বাবু” কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে আমরা মনুষ্যত্বহীন মনুষ্যরূপধারী পশু। পশু অপেক্ষাও আমরা অধম— কারণ আমাদের জ্ঞান ও বিবেক আছে—পশুদিগের তাহাও নাই। জন্মাবধি সুখের এবং বিলাসিতার মধ্যে লালিত-পালিত হওয়াতে

১২