পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমরা তিলমাত্র কষ্টসহিষ্ণু হইতে পারি না—এই কারণে ইন্দ্রিয়গণকে আমরা জয় করিতে পারি না—সারাজীবন ইন্দ্রিয়ের দাস হইয়া আমরা এক দুর্ব্বহ জীবনভার বহন করি।

 আমি প্রায় ভাবি—বাঙ্গালী কবে মানুষ হইবে—কবে ছার টাকার লোভ ছাড়িয়া উচ্চ বিষয়ে ভাবিতে শিখিবে—কবে সকল বিষয়ে নিজের পায়ের উপর দাঁড়াইতে শিখিবে—কবে একত্র শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করিতে শিখিবে— কবে অন্যান্য জাতির ন্যায় নিজের পায়ের উপর দাঁড়াইয়া নিজেকে “মানুষ” বলিয়া পরিচয় দিতে পারিবে। আজকাল বাঙ্গালীদিগের মধ্যে অনেকে পাশ্চাত্ত্য শিক্ষা পাইয়া নাস্তিক ও বিধর্ম্মী হইয়া যায়—দেখিলে বড় কষ্ট হয়। আজকাল বাঙ্গালীরা বাবুয়ানি ও বিলাসিতার স্রোতে ভাসিয়া গিয়া নিজের মনুষ্যত্ব হারাইতেছে—— দেখিলে বড় কষ্ট হয়। আজকাল বাঙ্গালীরা নিজের জাতীয় পরিচ্ছদকে ঘৃণা করিতে শিখিয়াছে—দেখিলে বড় কষ্ট হয়। বাঙ্গালীদের মধ্যে সবল, সুস্থ এবং বলিষ্ঠকায় লোক খুব কমই আছে—দেখিলে প্রাণে কষ্ট হয়। এবং সর্ব্বোপরি, বাঙ্গালীদিগের মধ্যে প্রত্যহ ভগবানের নাম করে এরূপ ভদ্রলোক খুব কমই আছে—দেখিলে প্রাণে বড় কষ্ট হয়। বাঙ্গালীরা আজকাল হইয়াছে—বিলাসিতাপ্রিয়, পরচর্চ্চাকারী, কুটিলহৃদয়, পর-সুখদ্বেষী এবং মনুষ্যত্ববিহীন—মা, ভাবিলে বড় কষ্ট হয়। আমরা পড়িতেছি—সম্মুখে যদি চাকরীর এবং অর্থের লোভ থাকে—তাহা হইলে কি লেখাপড়া—তাহা হইলে কি মনুষ্যত্বের অধিকারী হইতে পারা যায়? মা বাঙ্গালী কি কখনও মানুষ হইতে পারিবে? আপনার কি মত? মা, আমরা এবং আমাদের দেশ দিন ২ অধঃপতনে যাইতেছে। কে উদ্ধার করিবে? একমাত্র উদ্ধার কর্ত্তা—বঙ্গজননী—বঙ্গমাতা যদি বঙ্গসন্তানকে নূতনভাবে প্রস্তুত করিতে পারেন—তাহা হইলে পুনরায় বাঙ্গালী মানুষ হইবে।

 আমরা ভাল আছি। ছোটদাদাকে পত্র দিলাম। বাবা সোমবার

১৩