পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার যোগাযোগ করা চলিবে না। যে সাবধানবাণী তিনি আমার প্রতি করিয়াছিলেন এবং যেভাবে ও যে ভাষায় উহা প্রয়োগ করা হইয়াছিল সব মিলাইয়া গোটা পরিস্থিতিটাই একজন রাজবন্দী হিসাবে আমার কাছে অভিনন্দনসূচক তো ছিলই না, বরং অপমানজনকই বোধ হইয়াছিল। আমি বাঙ্গলা ও বর্ম্মা দেশের আরও কয়েকজন I. M. S. অফিসারকে দেখিয়াছি এবং আরও অনেক জেলে আমাকে কাটাইতে হইয়াছে; কিন্তু Major Flowerdew আমাকে যেভাবে সাবধান করিয়াছিলেন, এরূপ অভ্যর্থনার দুর্ভাগ্য কোথাও আমার হয় নাই। অবশ্য এ কথা বুঝিবার মত বোধশক্তি Major Flowerdew-র আছে কিনা জানি না, আমার মত অবস্থার বা শ্রেণীর একজন লোকের পক্ষে উহা প্রাপ্য নয়। তবু আমি তখন উত্তেজিত হই নাই, এবং এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতিটাকে যথাসম্ভব সহজ করিবার জন্য হাসিয়া উত্তর দিয়াছিলাম—দীর্ঘদিন আমাকে যখন জেলে কাটাইতে হইয়াছে তখন উহা আমার জানারই কথা।

 ৩। গত ডিসেম্বরে রেঙ্গুন জেলে স্থানান্তরিত হইবার পর আমার রোগনির্ণয় বা চিকিৎসার ব্যাপারে তিনি কোনও যত্ন লন নাই বরং তিনি আমার অসুস্থতাকে অস্বীকার করিতেই যেন বেশী ব্যস্ত ছিলেন। যখন আমি তাঁহাকে বলিলাম যে, আমার রোজই জ্বর হইতেছে এবং তাঁহাকে টেম্পারেচার চার্ট দেখাইলাম, তিনি মন্তব্য করিলেন—জ্বর আবার কোথায়? এতদ্বারা তিনি বোধহয় একথাই বলিতে চাহিয়াছিলেন যে, ১০১ অথবা ১০২ ডিগ্রী জ্বর না হইলে উহাকে গ্রাহ্যের মধ্যে আনা চলে না। যাহা হউক, সৌভাগ্যবশতঃ রেঙ্গুন জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র ফিজিসিয়ান কর্ণেল কেলসল আমার চিকিৎসার ব্যাপারে অধিকতর যত্ন লইয়াছিলেন; এবং আমি ঐ ঘটনাকে তখনকার মত ভুলিতে চেষ্টা করিয়াছিলাম।

 ৪। গত ফেব্রুয়ারী মাসে দ্বিতীয়বার রেঙ্গুন জেলে আসার পর আমি নিজেই সুপারিণ্টেণ্ডেণ্টের অফিসে গিয়া তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ

২৭৭