পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করি। আমি যখন তাঁহার সহিত কথা বলিতেছিলাম তিনি আমাকে এমন কি বসিতে পর্য্যন্ত বলেন নাই। এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াইবার জন্য আমি যথাশীঘ্র সম্ভব ভালয় ভালয় সেখান হইতে চলিয়া আসি। আমার কারাজীবনের গত আড়াই বৎসরের মধ্যে এই প্রথম একজন সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট আমাকে বসিতে বলার সৌজন্যটুকু পর্য্যন্ত দেখাইতে পারিলেন না। এ অভিযোগ করার প্রেরণা পাইতেছি এইজন্য যে, আমি বিশ্বাস করি, গভর্ণমেণ্ট তাঁহাদের অফিসারদের এই অসৌজন্যমূলক আচরণ নিশ্চয়ই অনুমোদন করেন না এবং ইহা একটা নিয়মবহির্ভূত ব্যাপার।

 ৫। যদি খোঁজ লওয়া হয়, গত ৪০ দিনের মধ্যে Major Flowerdew আমাকে কয় বার দেখিতে আসিয়াছেন, তাহা হইলেই এবার এখানে আসার পর আমার প্রতি তাঁহার মনোযোগ বা আমার চিকিৎসার ব্যাপারে তাঁহার আগ্রহ স্পষ্ট প্রতীয়মান হইবে। সপ্তাহে অন্ততঃ একবার অর্থাৎ প্রতি সোমবার আমাকে তাঁহার দেখিতে আসার কথা; সাধারণতঃ ইহাই নিয়ম। কিন্তু এ নিয়ম তিনি মানিয়া চলেন না। এমন কি পক্ষকাল কাটিয়া গেলেও তাঁহার দর্শন মেলে না। গত ১৪ তারিখ সোমবার তিনি যখন আমাকে দেখিতে আসেন তখন আমার সেলের দরজার বাহিরে দাঁড়াইয়াই প্রশ্ন করেন—ভাল আছেন ত? আমার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় এ প্রশ্ন এতই হাস্যকর যে আমাকেও হাসিয়া জবাব দিতে হয়—হ্যাঁ ধন্যবাদ। এরূপ প্রশ্ন হইতে ইহাই বুঝিতে হয় যে, তিনি ইচ্ছা করিয়াই আমার অসুখের গুরুত্ব লাঘব করার চেষ্টা করিতেছেন কিংবা আমার যে প্রত্যহ জ্বর হয়, ওজন কমিয়া যাইতেছে এবং আমি যে অজীর্ণতা, ক্ষুধামান্দ্য ও সেই সঙ্গে শারীরিক কষ্ট ভোগ করিতেছি এ সব বিষয়ে তিনি অবহিত নন। আমার শেষের অনুমানটাই যদি সত্য হয় তাহা হইলে ইহাতে তাঁহার কোনও লাভ হইবে না; কেননা আমার ওজন নিয়মিত রেকর্ড করিয়া রাখা হয়, প্রতি চার ঘণ্টা অন্তর

২৭৮