পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দিগ্‌দিগন্ত মুখরিত করিতেছেন, কেহ গঙ্গায় পবিত্র সলিলে আচমন করিয়া আপনাকে পবিত্র করিতেছেন—কেহ গুন্ গুন্ করিয়া গান করিতে ২ পূজার জন্য বনফুল তুলিতেছেন। সকলই পবিত্র—সকলই নয়ন ও মনের প্রীতিকর। কিন্তু হায়! যখন ভাবি সেই পুণ্যশ্লোক ঋষিকুল কোথায়? তাঁহাদের সেই পবিত্র মন্ত্রোচ্চারণ কোথায়? তাঁহাদের সেই যাগযজ্ঞ, পূজা হোম প্রভৃতি কোথায়? ভাবিলে হৃদয় বিদীর্ণ হয়! আমাদের ধর্ম্ম নাই, কিছুই নাই—জাতীয় জীবন পর্য্যন্তও নাই। আমরা এখন এক দুর্ব্বল শরীর পরদাসত্ব-ব্যবসায়ী, নষ্টধর্ম্ম, পাপিষ্ঠ জাতি! হায়! পরমেশ্বর! সেই ভারতের এখন কি শোচনীয় অবস্থা উপস্থিত! তুমি কি আমাদের উদ্ধার করবে না? এ ত তোমারই দেশ—কিন্তু দেখ ভগবান্, তোমার দেশের কি অবস্থা! তোমার অবতারগণ যে সনাতন ধর্ম্ম প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন তাহা কোথায়? আমাদের পূর্ব্বপুরুষ আর্য্যগণ যে জাতি এবং যে ধর্ম্ম গঠিত ও প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন তাহা এখন ছারখার হইয়াছে। দয়া কর, রক্ষা কর, ওহে দয়াময় হরি!

 মা, আমি যখন চিঠি লিখিতে বসি তখন পাগলের চেয়েও পাগল। কি লিখিব ভাবিয়া লিখিতে বসি না এবং কি বা লিখিতে পারি তাহ জানি না। মনে যে ভাবটি আগে আসে তাহাই লিপিবদ্ধ করি— ভাবি না কি লিখিতেছি বা কেন লিখিতেছি। ইচ্ছা হয় তাই লিখি—মন বলে—লেখ—তাই লিখি। যদি কিছু অসঙ্গত লিখিয়া থাকি তবে আমাকে মার্জ্জনা করিবেন।

 পূজ্যপাদ স্বর্গীয় গুরুদেব মহাশয়ের স্বর্গপ্রাপ্তির বিষয় যখন ভাবি তখন দুঃখিত হইব কি অনিন্দিত হইব তাহাভাবিয়া উঠিতে পারি না। মনুষ্য যখন এই পৃথিবী হইতে বিদায় গ্রহণ করে, তখন যে কোথায় যায় বা কিরূপ অবস্থা ভোগ করে তাহা আমরা জানি না। তবে চরমদশায় আমাদের জীবাত্মা পরমাত্মার সহিত বিলীন হইয়া যায়—

১৬