পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হইয়াছে। আমার এই আলাপের সুযোগ দেওয়ায় আমি আন্তরিক আনন্দিত হইয়াছি। মান্যবর স্বরাষ্ট্র সচিব মহোদয় যে সৌজন্য দেখাইয়াছেন তজ্জন্য আমি তাঁহাকে ধন্যবাদ জানাইতেছি। আমার সহিত এ পর্য্যন্ত যেরূপ ব্যবহার করা হইতেছিল এই ব্যবহার তাহা হইতে পৃথক।

 গভর্ণমেণ্টের উত্তর বড়দাদা ২৭শে এপ্রিল তারিখে আমাকে জানাইয়াছিলেন। এই উত্তরে বিষয়টি উভয়ের পক্ষেই স্পষ্টতর হইয়াছে। ১১ই এপ্রিল তারিখে গভর্ণমেণ্টের সর্ত্তের আমি যে উত্তর দিয়াছিলাম, বর্ত্তমান অবস্থা পর্য্যালোচনা করিয়া আমি পুনরায় সেই উত্তরই ঠিক বলিয়া মনে করিতেছি।

 আমার সিদ্ধান্ত—সহজ বিচারের ফল। ভাল করিয়া চিন্তা করিয়া দেখিলে ঐ সিদ্ধান্ত আরো দৃঢ়তর হয়। জীবনকে সহজ ভাবে বিচার করিয়া আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছি। ভালভাবে বিচার করিবার পর এই সিদ্ধান্ত আরো দৃঢ় হইয়াছে। কারাগারে আমার যতই দিন যাইতেছে ততই আমার মনে এই ধারণা দৃঢ়মূল হইতেছে যে, জীবন-সংগ্রামের মূলে রহিয়াছে মতবাদের সংঘর্ষ—সত্য এবং মিথ্যা ধারণার সংঘর্ষ। কেহ কেহ ইহাকে সত্যের বিভিন্ন স্তর বলিয়া থাকেন। মানুষের ধারণাই মানুষকে চালিত করিয়া থাকে। এই সমস্ত ধারণা নিষ্ক্রিয় নহে, ক্রিয়াশীল ও সংঘর্ষাত্মক।

 হেগেলের Absolute Idea, হপম্যান ও সোপেনহারের Blind Will এবং হেনরী বার্গসর Lean Vital-এর মতই এই সমস্ত ধারণা ক্রিয়াশীল। এই সমস্ত ধারণা নিজেদের পথ নিজেরা সৃষ্টি করিয়া লইবে। আমরা তো মাটির পুতুল মাত্র, ভগবানের তেজরাশির কয়েকটি স্ফুলিঙ্গ মাত্র আমাদের মধ্যে নিবদ্ধ। আমাদিগকে এই ধারণার নিকট আত্মোৎসর্গ করিতে হইবে।

 ঐহিক এবং জড় দেহের সুখ-দুঃখকে অগ্রাহ্য করিয়া যে এইভাবে আত্মনিবেদন করিতে পারে জীবনে তাহার সফলতা অবশ্যম্ভাবী।

৩১১