পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

না—বাঙ্গলার তরুণ যুবকেরা (আর সকলের কথা না হয় তর্কের খাতিরে বাদ দিলাম) আজও আপনাকে কি চোখে দেখে? আপনি যদি তাদের একেবারে “পর” বলে ভাবেন—তবে কি তাহাদের প্রতি অবিচার করা হয় না? তারা কি তাদের হৃদয়ের শ্রেষ্ঠ অর্ঘ্য আপনার চরণে ঢেলে দেয়নি? তারা কত আশা করেছিল যে দেশবন্ধু যখন ইহলোক ত্যাগ করে গেলেন তখন আপনি এগিয়ে এসে তাদের নেতৃত্বভার গ্রহণ করবেন। সে আশা যখন পূর্ণ হ’ল না তখন তাহাদের হৃদয়ের অপরিসীম ব্যথা ও হতাশা রাখবার কি আর স্থান ছিল? দেশবন্ধু জীবদ্দশায় বলতেন যে আপনি তাঁহার জীবদ্দশায় জনহিতকর কাজে প্রকাশ্যভাবে সংশ্লিষ্ট না হলেও তাঁহার অনুপস্থিতিতে আপনি তাঁর পরিত্যক্ত স্থান পূরণ করবেন।

 আপনি হয়তো বলবেন যে হিন্দু মহিলার কাজ পরিবারের মধ্যে, পর্দ্দার আড়ালে—public platform-এ নয়। আমি মা’র কর্ত্তব্য সম্বন্ধে উপদেশ দিবার ধৃষ্টতা রাখি না; কিন্তু আমার মনে হয় যে আজ আমাদের দেশের ও সমাজের সহজ অবস্থা নয়। আজ যে আমাদের ঘরে আগুন লেগেছে—মা। ঘরে আগুন লাগে যখন—তখন যিনি পর্দ্দানশীন তাঁকেও সাহস করে রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হয়। সন্তানকে বাঁচাবার জন্য— আগুনের হাত থেকে মূল্যবান সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য— তাঁকেও পুরুষ-বিক্রমে পরিশ্রম করতে হয়। তাতে কি তাঁর মর্য্যাদার বা grace-এর হানি হয়?

 বাঙ্গলার সাধনা প্রধানতঃ মাতৃমূর্ত্তির ভিতর দিয়ে প্রকট হয়েছে। কি ভগবান কি স্বদেশ—আমাদের আরাধ্য যা’ কিছু—আমরা তাহা মাতৃমূর্ত্তিরূপে কল্পনা করেছি। কিন্তু হায়! বাঙ্গলার পুরুষেরা আজ এত নির্ব্বীর্য্য ও কাপুরুষ হয়ে পড়েছে যে বাঙ্গলা দেশের জেলায় জেলায় স্ত্রীলোেকদের উপর যে অত্যাচার চলেছে তা প্রতিরোধ করতে অক্ষম। সে দিন (কয়েক মাস হ’ল) “সঞ্জীবনীতে” লিখেছিল—“আপনার মান রাখিতে জননী, আপনি কৃপাণ ধর গো।” কথাগুলি

৩২০