পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিন্তু মা ত কখনও স্বার্থপর হতে পারেন না—মা’র জীবন যে সন্তানের জন্য! যদি তাহাই হয় তবে সন্তানের কষ্টের সময়ে মা কি করিয়া স্থির হইয়া বসিয়া আছেন! তবে কি মা স্বার্থপর! না, না, কখনই হতে পারে না—মা কখনও স্বার্থপর হতে পারে না।

 মা, শুধু দেশের কি এরূপ শোচনীয় অবস্থা! দেখুন ভারতের ধর্ম্মের কি অবস্থা! কোথায় সেই পবিত্র সনাতন হিন্দুধর্ম্ম, আর কোথায় আমাদের অধঃপতিত ধর্ম্ম! কোথায় সেই পবিত্র আর্য্যকুল—যাঁহাদের পদধূলি লইয়া পৃথিবী পবিত্র হইয়াছে—আর কোথায় আমরা তাঁহাদেরই অধঃপতিত বংশধর! সে পবিত্র সনাতন ধর্ম্ম কি লোপ হইতে চলিল! দেখুন না চারিদিকে নাস্তিকতা অবিশ্বাস এবং ভণ্ডামী—তাই ত লোকেদের এত পাপ, এত কষ্ট, দেখুন না সেই ধর্ম্ম প্রাণ আর্য্যজাতির বংশধর এখন কিরূপ বিধর্ম্মী ও নাস্তিক হইয়া পড়িয়াছে! যাঁহার নাম, গুণগান ও ধ্যানই জীবনের একমাত্র কর্ত্তব্য ছিল তাঁহার নাম সমস্ত জীবনে ভক্তির সহিত একবার কয়জন লোক আজকাল ডাকে। মা, এসব দেখিলে এবং ভাবিলে, আপনার প্রাণ কি কাঁদে না, আপনার চক্ষে কি জল আসে না? সত্য সত্যই কি আপনার প্রাণ কাঁদে না—কখনই হইতে পারে না। মা’র প্রাণ ত কখনও নিষ্ঠুর হয় না।

 মা, একবার চক্ষু খুলিয়া দেখুন, আপনার সন্তানদের কি দুরবস্থা! পাপে, তাপে, সর্ব্বপ্রকার কষ্টে, অন্নাভাবে, ভালবাসার অভাবে—এবং হিংসা ও স্বার্থপরতার জন্য এবং সর্ব্বোপরি ধর্ম্মের অভাবের জন্য তাহারা যেন নরকের অগ্নিকুণ্ডে অহোরাত্র জ্বলিতেছে। আর দেখুন, সেই পবিত্র সনাতন ধর্ম্মের কি অবস্থা! দেখুন, সেই পবিত্র ধর্ম্ম এখন লোপ পাইতে চলিল। অবিশ্বাস, নাস্তিকতা, এবং কুসংস্কারে আমাদের সেই পবিত্র ধর্ম্ম এখন কতদূর অধঃপতিত ও অপভ্রষ্ট হইয়াছে। তার উপর, আজকাল ধর্ম্মের নামেই যত অধর্ম্ম হইতেছে —তীর্থস্থানেই যত পাপ! দেখুন না পুরীর পাণ্ডাদের

২০