পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 মা, এসব আপনাকে কেন লিখিতেছি—জানেন? আর কাহাকেই বা বলিব? কে বা শুনিবে? কে বা এ সমস্ত হৃদয়ে পোষণ করিবে? যাহাদের জীবন স্বার্থময়—তাহার ত এ সমস্ত কথা ভাবিতে পারে না—বা ভাবিবে না—কারণ তাহাতে তাহাদের স্বার্থের হানি হইবে কিন্তু মার জীবন ত স্বার্থময় নহে! মার জীবন ত সন্তানদের জন্য—দেশের জন্য! যদি ভারতের ইতিহাস পড়েন ত দেখিবেন কত ২ মা, ভারত মাতার সেবার জন্য জীবন যাপন করিয়াছেন এবং উপযুক্ত সময়ে প্রাণও দিয়াছেন। দেখুন অহল্যাবাঈ, মীরাবাঈ, দুর্গাবতী, —আর কত আছেন—আমার নাম মনে নাই। আমরা মাতৃস্তন্যে পুষ্ট—সুতরাং মাতৃউপদেশ এবং মাতৃশিক্ষা আমাদের যত উপকার ও উন্নতি করিতে পারে—আর কিছুতেই তত হয় না।

 মা যদি সন্তানকে বলেন—“তুই স্বার্থ লইয়া বসিয়া থাক”—তবে আর কি! বুঝিব সন্তানই হতভাগ্য! তাহা হইলে বুঝিতে হইবে এ কলিযুগে ভাল লোকের আর আবির্ভাব নাই। বুঝিতে হইবে ভারতের যাহা কিছু ছিল সবই নষ্ট হইয়াছে—আর কিছুই নাই! আর কিছু হবে না। চারিদিকে নৈরাশ্য! যদি তাহাই হয়—যদি প্রকৃতই আর কোন উন্নতির আশা নাই—যদি বসিয়া কেবল অধঃপতন ও অবনতি দেখিতে হইবে—তবে এত কষ্ট কেন? তবে যদি এ জীবনে আর কিছু করিতে পারিব না—তবে এ জীবনে আর কাজ কি?

 আমি যেন চিরকালই সকলের সেবক হয়ে থাকিতে পারি। আশা করি ওখানকার কুশল। এখানে সব মঙ্গল। আপনি আমাদের প্রণাম জানিবেন। পত্রের উত্তর দিবেন। এ পত্রের উত্তর দিবেন। ইতি—

আপনার 

চিরস্নেহাধীন 
সেবক 

সুভাষ 

২২