পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আপনার বর্ণনাগুলি এত জীবন্ত যে যদি চিত্রকলার কিছু জানিতাম তবে নিজের মনে ছবিগুলি ধরিয়া রাখার জন্য এবং আত্মতৃপ্তির জন্য আঁকিবার চেষ্টা করিতাম। কিন্তু উক্ত কলায় আমি অনভিজ্ঞ, তাই মানসপটে বিধৃত চিত্রাবলী লইয়াই সন্তুষ্ট থাকিতে হইবে।

 আমি সহজেই কল্পনা করিতে পারি, আপনার মনের অবস্থা বােম্বাই হইতে সুয়েজ যাইবার সময় কিরূপ হইয়াছিল। সুনীল জলধি ও নীল আকাশের নিরবচ্ছিন্নতা হইতে জীবন্ত প্রকৃতির স্পর্শ কামনায় হৃদয় কাতর। আমি একমাসের অধিক কলিকাতায় এক যােগে থাকিতে চাহি না। কারণ হাস্যময়ী প্রকৃতির সৌন্দর্য্য কামনায় প্রাণ ব্যাকুল হইয়া উঠে। অন্তরের জ্বালা জুড়াইবার জন্য দুর্ল্লভ মুহূর্ত্তে অনুপ্রেরণা দিবার জন্য প্রকৃতি না থাকিলে— আমার মনে হয় মানুষ সুখী হইতে পারে না। প্রকৃতির সঙ্গ ও শিক্ষা না পাইলে, জীবন মরুলােকে নির্ব্বাসনের মত, সকল রস ও অনুপ্রেরণা হারায়। জীবনের রৌদ্রোজ্জ্বল দিক ম্লান হইয়া যায়। আপনি আমার জন্য যে কষ্ট স্বীকার করিয়াছেন এবং আপনার অচিন্ত্য বর্ণনাগুলির জন্য আপনাকে বারংবার ধন্যবাদ দেওয়া ছাড়া, আমি আর কি বা করিতে পারি।

 আশা করি এতদিনে আপনাকে লণ্ডনে লেখা চিঠিগুলি পাইয়াছেন।

১৬।১০।১২

 আজ ডাক যাইবার দিন; আজই এই চিঠিখানি ডাকে দিতে হইবে। গত সােমবার আপনার একখানি পত্র পাইয়াছি। জানিয়া আনন্দিত হইলাম যে ক্যাপ্টেন ও মিসেস ওয়েব্যাণ্ডের কাছাকাছি আপনি আছেন; ও তাঁহাদের সহিত প্রায়ই দেখাশুনা হয়।

৩৪