পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কটক
৮।১।১৩

পরম পূজনীয় মেজদাদা,

 আর একটি বৎসর শেষ হইল। উন্নতি বা অবনতি যাহাই হইয়া থাকুক ৺ভগবানের নিকট এই বারোটি মাসের জন্য আমাদের দায়ী হইতে হইবে।

 আমার গত বৎসরের কার্য্যাবলী চিন্তা করিলে, জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন না তুলিয়া থাকিতে পারি না। টেনিসন্ বলিষ্ঠ আশাবাদী এবং তাঁহার দৃঢ় বিশ্বাস জগৎ উত্তরোত্তর প্রগতির পথে চলিয়াছে। কিন্তু ইহা কি সত্য? আমরা কি আমাদের আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে চলিয়াছি? আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, ভারতবর্ষ কি প্রগতির পথে চলিতেছে? আমার মনে হয় না। হয়ত অশুভ হইতে শুভের উদ্ভব হয়। হয়ত ভারত পাপের পঙ্কিল পথের মধ্য দিয়া শান্তি ও প্রগতির দিকে অগ্রসর হইতেছে। কিন্তু বিচারবুদ্ধি ও দূরদৃষ্টির দ্বারা যতদূর দেখা যায়—সবই অন্ধকার—গভীর অন্ধকার কেবল একনিষ্ঠ কর্ম্মী অথবা উচ্চমনা দেশভক্তকে অনুপ্রাণিত করিবার জন্য এখানে সেখানে ক্ষীণতম আশার আলোক। কখনো সেই আলোকরেখা উজ্জ্বলতর হইয়া উঠে, কখনো বা তমসা ঘনীভূত হয়। ভারতের ভবিষ্যৎ ইতিহাস ঝটিকাবিক্ষুব্ধ তমসাচ্ছন্ন আকাশের ন্যায়। ইংল্যাণ্ড বিশেষতঃ সমগ্র ইউরোপ হয়ত প্রগতির পথে। ধর্ম্মের তারকা ইউরোপের আকাশে উদীয়মান, কিন্তু ভারতের আকাশে অস্তাচলগামী। ভারতবর্ষ কি ছিল আর কি হইয়াছে? কি শোচনীয় পরিবর্ত্তন। কোথায় সেই মহর্ষি, মহাজ্ঞানী দার্শনিকবৃন্দ আমাদের পূর্ব্ব-পুরুষগণ, যাঁহারা জ্ঞানের শেষ সীমায় পৌঁছিয়াছিলেন? কোথায় তাঁহাদের অগ্নিগর্ভ ব্যক্তিত্ব? তাঁহাদের অনমনীয় ব্রহ্মচর্য?

৩৬