পাতা:পথের পাঁচালী.djvu/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
পথের পাঁচালী
পথের পাঁচালী

পথের পাঁচালী ১০৯ লড়াই দেখো! এক একজনের দেখা শেষ হইলে যেমন সে চোঙ হইতে চোখ সরাইয়া লইতেছি অমনি দুর্গ। তাহাকে মহা আগ্রহের সহিত জিজ্ঞাসা করিতেছিল, কি দেখলি রে ওর মধ্যে? সব সত্যিকারের। উঃ। সে কি অপূর্ব ব্যাপার দেখিয়াছে তাহা তাহাৱা বলিতে পারে না!: কি সে সব! সকলের দেখা একে একে হইয়া গেল। দুর্গ। চলিয়া যাইতেছিল, বুড়ো মুসলমানটি বলিল, দেখবে খুকী?'দুর্গা ঘাড় নাড়িয়া বলিল, না—আমার কাছে পয়সা নেই। লোকটি বলিল, এসো এসো খুকী, দেখে যাও—পয়সা লাগবে না দুর্গার একটু লজ্জা হইয়াছিল, মুখে বলিল, না:—কিন্তু আগ্রহে কৌতুহলে তাহার বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ, করিয়া উঠিল। লোকটি বলিল—এসো এসো, দোষ কি?... এস, দ্যাখো দুর্গা উজ্জ্বল মুখে পায়ে পায়ে বাক্সের কাছে আসিয়া দাড়াইল বটে, তবুও সাহস করিয়া মুখটা চোঙের মধ্যে দিতে পারে নাই। লোকটি বলিল, এই নলটার মধ্য দিয়ে তাকাও দিকি খুকী? দুর্গ। মাথার উড়ন্ত চুলের গোছা কানের পাশে সরাইয়া দিয়া চাহিয়া দেখিল। পরের দশ মিনিটের কথার সে কোনো বর্ণনা করিতে পারে না। সত্যিকারের মানুষ ছবিতে কি করিয়া দেখা যায়? কত সাহেব, মেম, ঘর বাড়ী, যুদ্ধ, সে সব কথা সে বলিতে পারে না। কি জিনিষই সে দেখিয়াছিল। অপুকে দেখাইতে বড় ইচ্ছা করে, দুর্গ। কত বার খুজিয়াছে, ও খেলা আর কোনও দিন আসে নাই। গল্প ভাল করিয়া শেষ হতে না হইতে দুর্গ। জ্বরের ধমকে আর বসিতে পারে না, উঠিয়া ঘরের মধ্যে কাথা মুড়ি দিয়া শোয়। | আজকাল বাবা বাড়ী নাই, অপুকে আর খুঁজিয়া মেলা দায়। বই দপ্তরে ঘুণ ধরিবার যোগাড় হইয়াছে। সকাল বেলা সেই যে সে এক পুটুলি কড়ি লইয়া বাহির হয়, আর ফেরে একেবারে দুপুর ঘুরিয়া গেলে খাইবার সময়। তাহার মা বকে—ছেলের না নিকুচি করেছে-তোমার লেখাপড়া একেবারে ছিকেয় উঠলো? এবার বাড়ী এলে সব কথা বলে দেবো, দেখো এখন তুমি | অপু ভয়ে ভয়ে দপ্তর লইয়া বসে। বইগুলা খুব চারিদিকে ছড়ায়। মাকে বলে, একটু খয়ের দাও মা, আমি দোয়াতের কালিতে দেবে। পরে সে বসিয়া বসিয়া হাতের লেখা লিখিয়া রৌদ্রে নেয়। শুকাইয়া গেলে খয়ের-ভিজানো কালি, চক চক করে—অপু মহাখুশির সহিত সেদিকে চাহিয়া থাকে—ভাবে—আর একটু পরে দেবো কাল থেকে -ওঃ কী চকচক করছে দ্যাগে একবার! পানের বাটা হইতে মাকে লুকাইয়া বড় একখণ্ড খয়ের লইয়া কালির দোয়াতে দেয়। পরে লেখা লিখিয়া শুকাইতে দিয়া কতটা আজ জ্বলজ্বল করে দেখিবার অন্য কৌতুহলের সহিত সেদিকে চাহিয়া থাকে। মনে হয় -আচ্ছা, যদি আর একটু দি? একদিন মার কাছে ধরা পড়িয়া যায়। মা বলে, ছেলের লেখার সঙ্গে খোজ নেই, কেবল ভ্যাল ভ্যালা খয়ের মোজ দরকার—রেখে দে খয়ের