পাতা:পথের পাঁচালী.djvu/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
পথের পাঁচালী
পথের পাঁচালী

হোঁ মারিয়া ছেলের পাত হইতে লুচি উঠাইয়া পাশের চাদরে রাখিয়া বলিলএগুলো রেখে দাও না! আবার এখুনি দেবে, খেয়ো এখন।

তাহার পর খানিকক্ষণ ধরিয়া ভীষণ শোরগোল হইতে লাগিল-“লুচির ধামাটা এ সারিতে” “কুমড়োটা যে আমার পাতে একেবারেই’, “ওহে, গরম গরম দেখে৷’, “মশাই কি দিলেন হাত দিয়ে দেখুন দিকি, স্রেফ কাঁচা ময়দা”…ইত্যাদি। ছাঁদার পরিমাণ লইয়া কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্রাহ্মণদের তুমুল বিবাদ! কে একজন চিৎকার কবিয়া বলিতে লাগিল-তা হলে সেখানে ভদরলোকেদের নেমস্তেন্ন করতে নেই। স-পাঁচ গণ্ডা লুচি এ একেবারে ধরা-বাঁধা হ্যাঁদার রেট-বল্লাল সেনের আমল থেকে বঁধা রয়েচে। চাইনে তোমার ছাদা, কন্দ্দশ্লো মজুমদার এমন জায়গায় কখনও–

কর্মকর্তা হাতে-পায়ে ধবিয়া কন্দৰ্প মজুমদারকে প্রসন্ন করিলেন।

অপুও এক পুটুলি ছাঁদা বহিয়া আনিল। সর্বজয়া তাড়াতাড়ি বাহিরে আসিয়া হাসিমুখে বলিল-ওমা, এ যে কত এনেচিস-দেখি খোল তো? লুচি, পানতুয়া, গজা-কত রে! ঢেকে রেখে দি, সকালবেলা খেয়ো এখন।

অপু বলিল-তোমায়ও কিন্তু মা খেতে হবে-তোমাব জন্যে আমি চেয়ে দু’বার করে পানতুয়া নিইচি।

সর্বজয়া বলিল–হ্যাঁরে, তুই বল্লি নাকি আমাব মা খাবে দাও?–তুই তো একটা হাবলা ছেলে!

অপু ঘাড় ও হাত নাড়িয়া বলিল-হ্যাঁ, তাই বুঝি আমি বলি। এমন করে বল্লাম তাবা ভাবলে আমি খাবো।

সর্বজয়া খুশির সহিত পুঁটুলিটা তুলিয়া ঘরে লইযা গেল।

খানিকক্ষণ পরে অপু সুনীলদের বাড়ি গেল। উহাদেব ঘবেব বোযিাকে পা দিযই শুনিল, সুনীলের মা সুনীলকে বলিতেছেন-ওসব কেন বযে আনলি বাড়িতে? কে আনতে বলেচে তোকে?

সুনীলও সকলের দেখাদেখি ছাঁদা বাধিঁয়াছিল, বলিল-কেন মা, সবাই তো নিলে–অপুও তো এনেচে।

সুনীলের মা বলিলেন–অপু আনবে না কেন-ও ফলারে বামুনের ছেলে। ও এরপরে ঠাকুরপুজো করে আর ছাদা বেঁধে বেড়াবে,-ওই ওদের ধারা। ওর মা-টাও অমনি হ্যাংলা। ওইজন্যে আমি তখন তোমাদের নিয়ে এ গাযে আসতে চাইনি। কুসঙ্গে পড়ে যত কুশিক্ষে হচ্ছে! যা, ওসব অপুকে ডেকে দিয়ে আয়—যা; না হয় ফেলে দিগে যা। নেমস্তন্ন করেচে। নেমস্তন্ন খেলিছোটলোকের মতো ওসব বেঁধে আনবার দরকাব কি!

অপু ভয় পাইয়া আর সুনীলদের ঘরে ঢুকিল না। বাড়ি ফিরিতে ফিবিতে ভাবিল-যাহা তাহার মা পাইয়া এত খুশি হইল, জেঠাইমা তাহা দেখিয়াই এত রাগিল কেন? খাবারগুলো কি ঢেলামাটি যে, সেগুলো ফেলিয়া দিতে হইবে? তাহার মা হাংলা? সে ফলাবে বামুনের ছেলে? বা রে, জেঠিমা যেন অনেক পানতুয়া-গজা খাইয়াছে, তাহার মা তো ও-সব কিছুই খাইতে পায় না। আর সে-ই বা নিজে