পাতা:পথের পাঁচালী.djvu/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২১৮
পথের পাঁচালী

মত চিকন নরম চুলগুলি অপুর খোলা গায়ে লাগিয়া যেন গা সির সির করে। হঠাৎ লীলা বই হইতে মুখ তুলিয়া বলিল—তুমি গান জানো?

অপু ঘাড় নাড়িল।

—তবে একটা গাও—

—তুমি জানো?

-একটু একটু, কেন বিয়ের দিন শোনোনি?

ছোট মোক্ষদা ঝি ঘরে উঁকি মারিয়া কহিল—এই যে দিদিমণি এখানে। আমিও মনে ভেবেচি তাই, উপরে নেই, পড়ার ঘরে নেই, তবে ঠিক-এসো দিকি, এই দুধ টুকু খেয়ে যাও, জুড়িয়ে গেলা-হাতে করে খুঁজে খুঁজে হয়রান—

রূপার ছোট গ্লাসে এক গ্লাস দুধ! লীলা বলিল-রেখে যা-এসে এর পর গ্লাস নিয়ে যাস—

ঝি চলিয়া গেল। আরও খানিকটা বইয়ের ছবি দেখা চলিল। এক ফাঁকে লীলা দুধের গ্লাস হাতে তুলিয়া বলিল-তুমি খেয়ে নাও আদ্ধেকটা—

অপু লজ্জিত সুরে বলিল-না।

—তোমাকে ভারি খোশামোদ কর্তে হয় সব তাতে-কেন ওরকম? আমাদের মুলতানী গরুর দুধ-খেয়ে নাও-ক্ষীরের মতো দুধ, লক্ষ্মী ছেলে—

অপু চোখ কুচকাইয়া বলিল-ইঃ লক্ষ্মী ছেলে? ভারি ইয়ে কি না? উনি আবার—

লীলা দুধের গ্লাস অপুর মুখে তুলিয়া দিয়া ঘাড় নাড়িয়া বলিল-আর লজ্জায় কোজ নেই—আমি চোখ বুজে আছি, নাও—

অপু এক চুমুকে খানিকটা দুধ খাইয়া-ফেলিয়া মুখ নামাইয়া লইল ও ঠোঁটের উপরের দুধের দাগ তাড়াতাড়ি কোঁচার খুঁটে মুছিতে মুছিতে হাসিয়া ফেলিল।

লীলা গ্লাসে চুমুক দিয়া বাকি দুধ টুকু শেষ করিল, পরে সেও খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিল।

বেশ মিষ্টি দুধ, না?

—আমার এঁটো খেলে কেন? খেতে আছে পরের এঁটো?

-আমার ইচ্ছে-একটুখানি থামিয়া কহিল-তুমি বল্লে জলছবি তুলতে জানো, ছাই জানো, দাও তো আজ আমার ক’খানা জলছবি তুলে?



পথের পাঁচালী
পঞ্চস্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ

জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সর্বজয়া চাহিয়া-চিন্তিয়া কোনো রকমে অপুর উপনয়নের ব্যবস্থা করিল। পরের বাড়ি, ঠাকুর-দালানের রোয়াকের কোণে ভয়ে ভয়ে কাজ সারিতে হইল। বাম্‌নী মাসি নাড়ু ভাজিতে