পাতা:পথের সঞ্চয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বন্ধু

ভয়ংকর আপিসের ভিড়ের মধ্যে এই জায়গাটিতে এখনো তাহার খোলা আকাশের জানলার ধারে একলা বসিবার আসন পাতা আছে।

 আমার বন্ধুর বাড়িটির পিছন দিকে ঢালু পাহাড়ের গায়ে ছোটো একটু বাগান আছে। ঐটুকু বাগান আনন্দিত ছোটো ছেলের আঁচলটির মতো ফুলের সৌন্দর্যে ভরিয়া উঠিয়াছে। সেই বাগানের দিকে মুখ করিয়া তাঁহাদের বৈঠকখানা ঘরের সংলগ্ন একটি লম্বা বারান্দা অপর্যাপ্ত ফুলের স্তবকে আমোদিত গোলাপের লতায় অর্ধ-প্রচ্ছন্ন হইয়া আছে। এই বারান্দায় আমি যখনখুশি একখানা বই হাতে করিয়া বসি, তাহার পরে আর বই পড়িবার কোনো প্রয়োজন বোধ করি না। ইঁহার দুটি ছোটো ছেলে ও ছোটো মেয়ের মধ্যে বাল্যবয়সের চিরানন্দময় নবীনতার উচ্ছ্বাস দেখিতে আমার ভারি ভালো লাগে। আমাদের দেশের ছেলেদের সঙ্গে ইহাদের আমি একটা গভীর প্রভেদ দেখিতে পাই। আমার মনে হয়, যেন আমরা অত্যন্ত পুরাতন যুগের মানুষ; আমাদের দেশের শিশুরাও যেন কোথা হইতে সেই পুরাতনত্বের বোঝা পিঠে করিয়া এই পৃথিবীতে আসিয়া উপস্থিত হয়। তাহারা ভালোমানুষ, তাহাদের গতিবিধি সংযত, তাহাদের বড়ো বড়ো কালো চোখদুটি করুণ— তাহারা বেশি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে না। আপনার মনেই যেন তাহার মীমাংসা করিতে থাকে। আর এই-সব ছেলেরা পৃথিবীর নবীনযুগের মহলে জন্মিয়াছে; তাহারা জীবনের নবীনতার আস্বাদে মাতিয়া উঠিয়াছে; তাহাদের সমস্তই ভাবিয়া-চিন্তিয়া করিয়া-কর্মিয়া লইতে হইবে, এইজন্য সব জায়গাতেই তাহাদের চঞ্চল পা ছুটিতে চায় এবং সকল জিনিসেই তাহাদের চঞ্চল হাত গিয়া পড়ে। আমাদের দেশের ছেলেদেরও

৯৭