পাতা:পথের সঞ্চয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পথের সঞ্চয়

সঙ্গে সকলে মিলিতে পারিতেছে। রঙ-করা তুলা প্রাণপণে মেঘের নকল করিয়াও মিলিতে পারিত না।

 তেমনি আয়র্লণ্ডই বল, স্কট্‌লণ্ডই বল, বা অন্য যে-কোনো দেশই বল, সেখানকার জনসাধারণের চিত্তে বিশ্বজগতের আলো এমন করিয়া পড়ে যাহাতে সে একটা বিশেষ রঙ ফলাইয়া তুলে। বিশ্বমানবের চিদাকাশ এমনি করিয়াই বর্ণ বৈচিত্র্যে সুন্দর হইয়া উঠিতেছে।

 কবি ভাবের আলোককে কেবল প্রকাশ করেন তাহা নহে, তিনি যে-দেশের মানুষ সেই দেশের হৃদয়ের রঙ দিয়া তাহাকে একটু বিশেষ ভাবে সুন্দর করিয়া প্রকাশ করেন। সকলেই যে করিতে পারেন তাহা বলি না, কিন্তু যিনি পারেন তিনি ধন্য। আমাদের দেশে বৈষ্ণব-পদাবলি বাঙালি কাব্য রূপেই বিশ্বকাব্য। তাহা বিশ্বের জিনিস বিশ্বকে দিতেছে, কিন্তু তাহারই মধ্যে নিজের একটা রস যোগ করিয়া দিতেছে; নিজের একটি রূপের পাত্রে তাহাকে ভরিয়া দিতেছে।

 সংসারের রণক্ষেত্রে লড়াই করা যাহার ব্যবসায় তাহাকে কবজ পরিতে হয়; তাহাকে সংসারের সমস্ত আবরণ আচ্ছাদন গ্রহণ করিতে হয়; নহিলে পদে পদে চারি দিক হইতে তাহাকে আঘাত লাগে। কিন্তু, আপনাকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যাহার কাজ, আবরণের অভাবই তাহার যথার্থ সজ্জা। কবি য়েট্‌সের সঙ্গে আলাপ করিয়া আমার ঐ কথাই মনে হইতেছিল। এই একটি মানুষ, ইনি নিজের চিত্তের অবারিত স্পর্শশক্তি দিয়া জগৎকে গ্রহণ করিতেছেন। মানুষ নানা শিক্ষার ভিতর দিয়া, অভ্যাসের ভিতর দিয়া, অনুকরণের ভিতর দিয়া, যেমন করিয়া চারিদিককে দেখে এ দেখা তেমন দেখা নহে।

১০৪