পাতা:পথের সঞ্চয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পথের সঞ্চয়

ভিতর দিয়া নিজের চিত্তকে উপলব্ধি করিতে আরম্ভ করিয়াছিলাম। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রধান গৌরব এই যে, তিনি বঙ্গসাহিত্যে এমন একটি যুগের প্রবর্তন করিয়াছিলেন যখন বাঙালি আপনার কথা আপনার ভাষায় বলিয়া আনন্দ ও গর্ব অনুভব করিতে পারিয়াছিল। তাহার আগে আমরা স্কুলের বালক ছিলাম; অভিধান ও ব্যাকরণ মিলাইয়া ইংরেজি ইস্কুলের এক্সের্সাইজ লিখিতাম; নিজের ভাষা ও সাহিত্যকে অবজ্ঞা করিতাম। হঠাৎ বঙ্গদর্শনের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে নিজের একটা ক্ষমতা দেখিতে পাইলাম। আমাদেরও যে একটা সাহিত্য হইতে পারে এবং তাহাতেই যে যথার্থভাবে আমাদের মনের ক্ষুধানিবৃত্তি করিতে পারে ইহা আমরা অনুভব করিলাম। এই যে শুরু হইল এইখানেই ইহার শেষ হইল না। ইহার আগে চোখ বুজিয়া আমরা বলিয়াছিলাম, আমাদের কিছুই নাই; এখন হইতে খোঁজ পড়িয়া গেল আমাদের কী আছে। বঙ্গদর্শনেই গোড়ার দিকে যাহারা কঁৎ ও মিল্‌কে সিংহাসনে বসাইয়াছিলেন তাঁহারাই অবশেষে দেশের ধর্মকেই সেই রাজাসন দিবার জন্য দলে-বলে উদ্যোগ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন।

 এই উদ্যমের স্রোত নানা শাখা-প্রশাখায় এখনো অগ্রসর হইতেছে। রাজসভায় ভারতবর্ষীয় অমাত্যসংখ্যা বাড়াইতে হইবে, আমাদের এ ইচ্ছা সাধন হওয়া রাজার হাতে; কিন্তু আমাদের মন স্বাধীন হইয়া আপনার পথে আপন সফলতার অভিমুখে অগ্রসর হইবে, এই ইচ্ছা সফল হওয়া আমাদের নিজের শক্তির উপর নির্ভর করে। আমরা যে-কেহ যে-কোনো দিকে নিজের চেষ্টায় নিজের শক্তিকে সার্থক করিতে পারিব, সেই লোকই দেশের আত্মশক্তি-উপলব্ধিকে প্রশস্ত করিয়া দিব।

১০৮