পাতা:পথের সঞ্চয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পথের সঞ্চয়

 স্টপ্‌ফোর্ড্ ব্রুকের হাতে আমার এই তর্জমাগুলির একটি কপি পড়িয়াছিল। সেই উপলক্ষ্যে তিনি একদিন আমাকে ডিনারের নিমন্ত্রণ করিয়াছিলেন। তিনি বৃদ্ধ, বোধ করি তাঁহার বয়স সত্তর বছর পার হইয়া গিয়াছে। তাঁহার একটা পায়ের রক্তপ্রণালীতে প্রদাহের মত হইয়াছে, চলা তাঁহার পক্ষে কষ্টকর; সেই পা একটা চৌকির উপর তিনি তুলিয়া বসিয়া আছেন। বার্ধক্য কোনো কোনো মানুষকে পরাভূত করিয়া পদানত করে, আবার কোনো কোনো মানুষের সঙ্গে সন্ধিস্থাপন করিয়া তাহার সঙ্গে বন্ধুর মতো বাস করে। ইঁহার শরীরমনে বার্ধক্য তাহার জয়পতাকা তুলিতে পারে নাই। আশ্চর্য ইঁহার নবীনতা। আমার বার বার মনে হইতে লাগিল, বৃদ্ধের মধ্যে যখন যৌবনকে দেখা যায় তখনই তাহাকে সকলের চেয়ে ভালো করিয়া দেখা যায়। কেননা, সেই যৌবনই সত্যকার জিনিস; তাহা শরীরের রক্তমাংসের সহিত জীর্ণ হইতে জানে না; তাহা রোগতাপকে আপনার জোরেই উপেক্ষা করিতে পারে। তাঁহার দেহের আয়তন বিপুল, তাঁহার মুখশ্রী সুন্দর; কেবল তাঁহার পীড়িত পায়ের দিকে তাকাইয়া মনে হইল, অর্জুন যখন দ্রোণাচার্যের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন তখন প্রণামনিবেদনের স্বরূপ প্রথম তীর তাঁহার পায়ের তলায় ফেলিয়াছিলেন, তেমনি বার্ধক্য তাহার যুদ্ধ আরম্ভের প্রথম তীরটা ইঁহার পায়ের কাছে নিক্ষেপ করিয়াছে।

 বিধাতা যে-জীবনটা ইঁহাকে দান করিয়াছেন সেটাকে সকল দিক হইতে আনন্দের সামগ্রী করিয়া দিয়াছেন; ছবি, কবিতা, প্রকৃতির সৌন্দর্য, এবং লোকালয়ে মানবজীবনের বিচিত্র লীলা, সকলের প্রতিই তাঁহার চিত্তের ঔৎসুক্য প্রবল। চারি দিকের জগতের এই স্পর্শানুভূতি, এই রস গ্রহণের শক্তি তাঁহার বয়ো-

১১৪