পাতা:পথের সঞ্চয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পথের সঞ্চয়

আপনার তেজে চারি দিকে ছড়াইয়া পড়ে।

 এখানকার লণ্ডন একাডেমি অফ ম্যুজিকের অধ্যক্ষ ডাক্তার ইয়র্ক্‌ট্রটারের সঙ্গে আমার দেখা হইয়াছে। তিনি ভারতবর্ষীয় সংগীতের কিছু কিছু পরিচয় পাইয়াছেন। যাহাতে লণ্ডনে এই সংগীত আলোচনার একটা উপায় ঘটে সেজন্য আমার নিকট তিনি বারম্বার ঔৎসুক্য প্রকাশ করিয়াছেন। যদি কোনো ভারতবর্ষীয় ধনী রাজা কোনো বড় ওস্তাদ বীণাবাদককে এখানে কিছুকাল রাখিতে পারেন তাহা হইলে, তাঁহার মতে, বিস্তর উপকার হইতে পারে।

 উপকার আমাদেরই সব-চেয়ে বেশি। কেননা, আমাদের শিল্পসংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা আমরা হারাইয়াছি। আমাদের জীবনের সঙ্গে তাহার যোগ নিতান্তই ক্ষীণ হইয়া আসিয়াছে। নদীতে যখন ভাঁটা পড়ে তখন কেবল পাঁক বাহির হইয়া পড়িতে থাকে; আমাদের সংগীতের স্রোতস্বিনীতে জোয়ার উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছে বলিয়া, আমরা আজকাল তাহার তলদেশের পঙ্কিলতার মধ্যে লুটাইতেছি। তাহাতে স্নানের উল্‌টা কাজ হয়। আমাদের ঘরে ঘরে গ্রামোফোনে যে-সকল সুর বাজিতেছে, থিয়েটার হইতে যে-সকল গান শিখিতেছি, তাহা শুনিলেই বুঝিতে পারি, আমাদের চিত্তের দারিদ্র্যে কদর্যতা যে কেবল প্রকাশমান হইয়া পড়িয়াছে তাহা নহে, সেই কদর্যতাকেই আমরা অঙ্গের ভূষণ বলিয়া ধারণ করিতেছি। সস্তা খেলো জিনিসকে কেহ একেবারে পৃথিবী হইতে বিদায় করিতে পারে না; একদল লোক সকল সমাজেই আছে, তাহাদের সংগতি তাহার ঊর্ধ্বে উঠিতে পারে না— কিন্তু, যখন সেই সকল লোকেই দেশ ছাইয়া ফেলে তখনই সরস্বতী সস্তা দামের কলের পুতুল হইয়া পড়েন। তখনই আমাদের সাধনা হীনবল হয়

১৫২