পাতা:পথের সঞ্চয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সমাজভেদ

আমরা যখন বিলাতে যাত্রা করি তখন সেটা কেবল দেশ হইতে দেশান্তরে যাওয়া নয়, আমাদের পক্ষে সেটা একটা নূতন সংসারে প্রবেশ করা। জীবনযাত্রার বাহ্য প্রভেদগুলাতে বড়ো-একটা-কিছু আসে-যায় না। আমাদের সঙ্গে বসনে ভূষণে আহারে বিহারে বিদেশীর সাদৃশ্য থাকিবে না, সেটা তো ধরা কথা, সুতরাং সেখানে বিশেষ বাধে না। কিন্তু, কেবল জীবনযাত্রায় নহে, জীবনতত্ত্বে একটা জায়গায় আমাদের গভীরতর অমিল আছে, সেইখানেই দিক্‌নির্ণয় করা হঠাৎ আমাদের পক্ষে কঠিন হইয়া উঠে।

 জাহাজে উঠিয়াই আমরা প্রথম সেটা অনুভব করিতে শুরু করি। বুঝিতে পারি, এখন হইতে আমাদিগকে আর-এক সংসারের নিয়মে চলিতে হইবে। হঠাৎ এতখানি পরিবর্তন মানুষের পক্ষে অপ্রিয় এইজন্যই আমরা সেটাকে ভালো করিয়া বুঝিয়া দেখিবার চেষ্টা করি না, কোনোমতে মানিয়া চলি কিম্বা মনে মনে বিরক্ত হইয়া বলি, ইহাদের চাল-চলনটা অত্যন্ত বেশি কৃত্রিম।

 আসল কথা, ইহাদের সঙ্গে আমাদের সামাজিক অবস্থার যে-প্রভেদ আছে সেইটেই গুরুতর। পরিবার এবং পল্লীমণ্ডলীর সীমায় আসিয়া আমাদের সমাজ থামিয়াছে। সেই সীমার মধ্যেই পরস্পরের ব্যবহার সম্বন্ধে আমাদের কতকগুলা বাঁধা নিয়ম আছে। সেই সীমার দিকে দৃষ্টি রাখিয়াই আমাদের কী করিতে আছে এবং কী করিতে নাই তাহা নির্দিষ্ট হইয়াছে।

১৫৬