পাতা:পথের সঞ্চয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সমুদ্রপাড়ি

সে সম্বন্ধে ভাবনা পরিহার করিয়া জড় প্রকৃতির উপর বরাত দিয়া কোনোক্রমে দিন কাটানো যায়। এ কথা কিছুতেই আমরা জোর করিয়া বলিতে পারি না যে, ইহা কিছুতেই চলিবে না। কারণ, তাহা বলিতে গেলেই ভার বহন করিতে হয়। শেষকালে গোড়ায় গিয়া দেখি, সেই ভার বহন করিবার ভরসা এবং শক্তি আমাদের নাই। এই জন্য আমরা কেবলই দুঃখ এবং অসুবিধা বহন করি, কিন্তু দায়িত্ব বহন করিতে চাই না।

 একজন উচ্চপদস্থ রেলোয়ে ইঞ্জিনিয়ার আমাদের সহযাত্রী আছেন; তিনি আমাকে বলিতেছিলেন, “চাবি তালা প্রভৃতি নানা ছোটোখাটো প্রয়োজনের জিনিস আমি রেলোয়েবিভাগের জন্য এই দেশ হইতেই সংগ্রহ করিতে অনেক চেষ্টা করিয়াছি। কিন্তু, বরাবর দেখিতে পাই, তাহার মূল্য বেশি, অথচ জিনিস তেমন ভালো নয়।” এ দিকে পণ্যদ্রব্যের দাম এবং বেতনের পরিমাণ বাড়িয়াই চলিয়াছে, অথচ এখানে যে-সমস্ত দ্রব্য উৎপন্ন হইতেছে পৃথিবীর বাজারদরের সঙ্গে তাহা তাল রাখিয়া চলিতে পারিতেছে না। তিনি বলিলেন, য়ুরোপীয় কর্তৃত্বে এ দেশে যে-সমস্ত কারখানা চলিতেছে এ দেশের লোকের উপর তাহার প্রভাব অতি সামান্য। আর, দেশীয় কতৃত্বে যেখানে কাজ চলে সেখানে দেখিতে পাই পুরা কাজ আদায় হয় না— মানুষের যতখানি শক্তি আছে তাহার অধিকাংশকেই খাটাইয়া লইবার যেন তেজ নাই। এই জন্যই মজুরির পরিমাণ অল্প হওয়া সত্ত্বেও মূল্য কমিতে চায় না। কেননা, মানুষ যতগুলি খাটিতেছে শক্তি ততটা খাটিতেছে না।

 এ কথাটা শুনিতে অপ্রিয় লাগে, কিন্তু দেশের দিকে তাকাইয়া দেখিলে সর্বত্রই এইটেই চোখে পড়ে। আমাদের দেশে সকল কাজই দুঃসাধ্য হইয়া উঠিয়াছে, তাহার একটিমাত্র কারণ

৪৫