পাতা:পথ ও পথের প্রান্তে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথে ও পথের প্রান্তে br○ NᏬ☾ ঘোর বর্ষা নেমেছে। এমনতরো বাদলে আমার মনের শিখরদেশে প্রায়ই স্বরের মেঘ ঘনিয়ে আসে আর হৃদয়ের মধ্যে পেখম-মেলা ময়ূরের নাচও শুরু হয়। কিন্তু এবারে কী হোলো, এখনো আষাঢ়ের আহবানে আমার অন্তর সাড়া দিল না। হয়তো ছবি অঁাকতে যদি বসি তাহলে কলম সরবে কিন্তু কাব্যভাবনার স্পর্শে তাকে চঞ্চল করতে পারছে না । এসে অবধিই কেমন আমার মনে হচ্ছে দেশের হাওয়ায় আমার নিমন্ত্রণ বন্ধ হয়ে গেছে, এখানে দরজা খোলা হোলো না। বুঝি সেই জন্যেই কী ভাবা, কী লেখা, কী কাজ করা কিছুই সহজ হয়ে উঠছে না, সামান্ত কতব্যগুলোও মনকে ভারাক্রান্ত করছে। কিছুকাল পূর্বে এমন একদিন ছিল যখন আমার মনের নিভৃত দেশে একটি পূজার আয়োজন সম্পূর্ণ হয়ে উঠেছিল, তখন সংসারের সমস্ত বিক্ষোভ থেকে সেইখানে প্রতিদিন যাতায়াত করবার একটি যেন পায়ে চলা পথ তৈরি হয়ে আমাকে আমার কাছ থেকে দূরে আনতে পেরেছুে। তার পরে নানা কঠিন চিন্তা, নানা জটিল কাজ, নানা চিত্তবিক্ষেপ আমাকে কোথায় সরিয়ে নিয়ে গেছে—সে-পথের নাগাল পাচ্ছিনে। চিত্তের মধ্যে যেখানে গভীরতা সেখানে প্রতিষ্ঠালাভ করলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নাড়ায় বিচলিত করতে পারে না। সেখানে “আমি”-নামক উৎপাতটা সাহস করে ঢুকুতে চায় না । সেইখানকার বেদীর নিচে আচঞ্চল আসন পেতে বসবার জন্তে আজকাল আমাকে কেবলি তাগিদ করছে ।