পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১০৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
১০৩

ফিরিয়া বসে, যে বলে এই সকল কাম্যবস্তুর কিছুই আমি চাই না, এগুলি ক্ষণস্থায়ী ও অসার, বাহিরের ঘটা দেখিয়া সে ভোলে নাই; কিন্তু যে বিশ্বের প্রাণস্বরূপ, জীবের প্রাণস্বরূপ, যিনি মনের মন, প্রাণের প্রাণাধিক, যাঁহার শ্রীমুখের অণু-পরমাণু শোভা লইয়া সরসীতে পদ্ম ও বনে-উপবনে গোলাপ-কুন্দ-যূঁই-মল্লিকা ফুটিতেছে, যাঁহার অপরূপ লাবণ্যের এক তিল প্রিয়তমার মুখে ও শিশুর হাস্যে প্রকাশ পাইয়া আমাদিগকে মুগ্ধ করিতেছে, শত কুসুম ও শত চন্দনতরুর সুঘ্রাণে যাঁহার অঙ্গগন্ধ ঘোষিত হইতেছে, শত মধুচক্র, খর্জ্জুর-আম্র-পনস-ইক্ষু যাঁহার অমৃতরসের সন্ধান দিতেছে, যিনি সমস্ত সৌন্দর্য্য-মাধুর্য্য ও আনন্দের উৎস-স্বরূপ—তাঁহাকেই মাত্র যদি কেহ চাহিয়া, সমস্ত ইন্দ্রিয়ের গতি-মুখ ফিরাইয়া তাঁহারই জন্য প্রতীক্ষা করে—সেইরূপ অসামান্য ব্যক্তির মনস্তত্ত্ব অন্যদেশ সহসা বুঝিতে পারিবে না। কিন্তু তাহা ভারতে অবিদিত নহে। যে ব্যক্তি এইভাবে বৈষ্ণবী মায়া কাটাইয়াছে, সে তাঁহার সহিত সমান আসনের দাবী করিতেছে। দেবতার মধ্যে একমাত্র শিব ও ব্রহ্মা এই বৈষ্ণবী মায়ায় ধরা দেন নাই। এদিকে বিষ্ণুও নিশ্চেষ্ট ছিলেন না। কৈলাসের রত্নময় পুরী শিবকে দিয়া তিনি কুবেরকে তাঁহার ভাণ্ডারী নিযুক্ত করিয়া দিলেন; কিন্তু শিব শ্মশানে-মশানে ফিরেন, বুড়ো বলদের উপর শওয়ার হন, উচ্চৈঃশ্রবা ঘোড়া বা ঐরাবত হাতীর দিকে ফিরিয়াও তাকান না। চন্দন, অগুরু প্রভৃতি গন্ধদ্রব্যের তাঁহার কাছে কোন মূল্যই নাই; ভস্ম-চন্দন ও শ্মশানের নর-কঙ্কাল তাঁহার অঙ্গের সৌষ্ঠব সাধন করে।

 শিব ও ব্রহ্মা—এই দুই দেবতামাত্র বিষ্ণুমায়ায় অভিভূত হন নাই। নিবৃত্তির স্বর্গে আর কোন দেবতার প্রবেশাধিকার নাই।