পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১১০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০৪
পদাবলী-মাধুর্য্য

 গ্রাম্য কবি লিখিয়াছেন—

‘‘বিকায় নাকো অন্য সুতো, বিনে তাঁতি নন্দের সুত
সে হাটের প্রধান তাঁতি, প্রজাপতি, পশুপতি,
আর যত আছে তাঁতি, তাঁদের শুধু যাতায়াত।’’

স্বয়ং বিষ্ণুর ছাপ-মারা সুতোই এই হাটের একমত ক্রয়-বিক্রয়ের পণ্য। বিষ্ণু নিজে চৈতন্যপার্ষদ পুণ্ডরীক বিদ্যানিধির মত ভোগের মুখোস-পরা নিবৃত্তির দেবতা। তাঁহার আবাস-স্থান তিমি-নক্র-তিমিঙ্গিল-সঙ্কুল উত্তাল তরঙ্গ ও আবর্ত্তময় মধ্য সমুদ্র, তথায় তাঁহার শয্যা একটি বট পত্র, মস্তকোপরি শতশীর্ষ বিষধর ভীষণ অনন্ত নাগের লেলিহান জিহ্বা; এই ভয়ঙ্কর স্থান ও পরিবেষ্টনীর মধ্যে তিনি যোগ-নিদ্রায় নিদ্রিত—এই অবস্থায় কি কাহারও চক্ষে ঘুম আসিতে পারে, কিন্তু পরম নির্ব্বিঘ্ন যোগেশ্বরের যোগ-সমাধির ইহাই উপযোগী স্থান। ঈদৃশ দেবতার নিকট যে ভক্ত যাইতে ইচ্ছা করিবে, শত কষ্টিপাথরে কষিয়া সে মেকী কিনা তিনি পরীক্ষা করিয়া লইয়া থাকেন। যে ভোগৈশ্বর্য্যবিমুখ হইয়া নিবৃত্তির পথে যাইতে চাহিবে, বৈষ্ণবী মায়া তাহাকে ফিরাইবার জন্য কত প্রলোভন ও কত বিভীষিকা প্রদর্শন করে, তাহা যিশুর সয়তান কর্ত্তৃক প্রলুদ্ধ হওয়ার কাহিনী, বুদ্ধদেবের মারের সহিত সংঘর্ষ ও শিবকৃত মদনভস্মের পরিকল্পনায় কবিরা আঁকিয়া দেখাইয়াছেন। এই নিবৃত্তিপন্থীকে টলাইবার জন্য ইন্দ্রদেব সর্ব্বদা অপ্সরীদিগের শরণ লইয়াছেন, সে সকল গল্প পুরাণকারেরা রচনা করিয়া এই সত্য প্রমাণ করিয়াছেন যে, যাঁহারা ভোগের পথ ছাড়িয়া যোগের পথে যাইতে চাহেন, প্রকৃতি তাহাদিগকে লুব্ধ করিবার জন্য সতত প্রয়াসী। ভিখারী রাস্তায় রাস্তায় সারাদিন চীৎকার করিয়া মুষ্টি ভিক্ষা পাইতেছে না, কিন্তু ভোগবিমুখ নিবৃত্তিকামী সাধুকে ভুলাইবার জন্য ধনকুবেরগণ তাঁহাদের