পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১১৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
১০৭

 মান শব্দটির প্রতিশব্দ আর কোন ভাষায় আছে কি না, জানি না। কোমল মনোভাব বুঝাইতে বাঙালীরা অনেকগুলি শব্দ সৃষ্টি করিয়াছে মানটি তাহাদের অন্যতম, ইংরেজীতে ইহার প্রতিশব্দ থাকা তো দূরের কথা, ইহার ভাবার্থ বুঝানও একরূপ অসম্ভব। ইহার অর্থ রাগ, ক্রোধ, গোস্মা বা খাপ্পা হওয়া নহে। এই সকল কাঠ-খোট্টা শব্দে মানের মাধুর্য্য বুঝান শক্ত। ইহা কৃত্রিম রাগও নহে; কারণ মূলে উপেক্ষার আঘাত আছে। ইহা প্রণয়ীর চিত্তের প্রেমের গভীরতা পরীক্ষা করিবার একটা কষ্ঠিপাথর; যিনি মান করেন, তিনি প্রেমিককে ছাড়িতে চাহেন না, বরং আরও কাছে আনিতে চাহেন—যদিও ইহা বাহ্যে কঠোর, ইহার ভিতরটা একবারে কুসুমকোমল। মানিনী যাহা চাহেন না বলেন, তাহাই আরও বেশী করিয়া চাহেন, অথচ মুখ মুখ ফুটিয়া কিছুতেই বলিবেন না—ইহা গভীর প্রেমের ছদ্মবেশ। এক বাঙালী কবি নিম্নলিখিত কয়েকটি ছত্রে মানের স্বরূপ বুঝাইতে চেষ্টা করিয়াছেন

‘‘এক চক্ষু বলে আমি কৃষ্ণরূপ হেরব,
অপর চক্ষু বলে আমি মুদিত হয়ে রব।
এক পদ কৃষ্ণ-পাশে যাইবারে চায়,
আর পদে বার বার বারণ করে তায়।’’

 যাহা হউক, এখন মানের মূল প্রসঙ্গে যাওয়া যা’ক। সখীরা রাধাকে নানারূপ মিষ্ট ভর্ৎসনা করিতেছে:

‘‘ভাগে মিলল ইহ সময় বসন্ত,
ভাগে মিলল ইহ শ্যাম রসবন্ত!
ভাগে মিলল ইহ প্রেম-সঙ্ঘতি।
ভাগে মিলল ইহ সুখময় রাতি।
আজি যদি মানিনী তেজবি কান্ত,
জনম গোঙাঙিবী রোই একান্ত।’’