পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১১৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০৮
পদাবলী-মাধুর্য্য

ভাগ্যে এমন বসন্তকাল, এমন রসিক প্রেমিক, এমন বন্ধু ও এমন সুখময় রাত পাইয়াছ, আজি যদি এমন দিনে মান করিয়া কান্তকে ত্যাগ কর, তবে তোমার কাঁদিয়াই জীবন কাটাইতে হইবে। এখানে “সঙ্ঘতি” অর্থে বন্ধু (প্রেমিক)। পূর্ব্ববঙ্গে এখনও সাঙ্গাইত কথা প্রচলিত আছে। ইহার অর্থ প্রেমিক।

 কৃষ্ণ পদ স্পর্শ করিয়া আছেন, সেই স্পর্শের গৌরবে রাধা আবিষ্ট হইয়া আছেন—তাঁহার বাহিরের জ্ঞান নাই। স্পর্শরসে তিনি আত্মহারা। হতাশ কৃষ্ণ এবার ফিরিয়া যাইতেছেন—রাধাকুণ্ডে প্রাণত্যাগ করিতে। কিন্তু একবার কতকটা যাইয়া ফিরিয়া চাহিতেছেন, রাধার মান ভাঙ্গিল কি না দেখিতে। এইভাবে পুনঃ পুনঃ থামিয়া থামিয়া কৃষ্ণ চলিয়া গেলেন।

 কৃষ্ণের কোমল স্পর্শে আত্মহারা হইয়া রাধার মন বাস্তব জগতে জাগিয়া উঠিল, তখন মান আপনা হইতেই ভাঙ্গিয়া গেল এবং কৃষ্ণের জন্য মন হাহাকার করিয়া উঠিল। তাঁহাকে ফিরাইয়া আনিবার জন্য রাধা সখীদের সাধিতে লাগিলেন। অনেক কথার কাটাকাটি হইল, সখীরা সময় পাইয়া বেশ দু’কথা শুনাইতে ছাড়িল না। রাধা বিলাপ করিয়া বলিলেন: “নারী জনমে হাম না করিলু ভাগী। এখন মরণ শরণ ভেল মানকি লাগি।” নারীজন্মে আমি কোন ভাগ্যই করি নাই, এখন মানের জন্য আমার মৃত্যুর শরণ লইতে হইল। কৃষ্ণকমল গেঁয়ো কথায় “আমি অতি পাষাণ-বুকী, সে মুখে হ’লাম বিমুখী–সে যে কেঁদে কেঁদে সেধে গেল গো” বলিয়া হৃদয়ের তীব্র ব্যথা বুঝাইয়াছেন; তাঁহার আর একটি পদ এইরূপ “আমি নহি প্রেমযোগ্য, করেছিলাম প্রেমযজ্ঞ, যোগ্যাযোগ্য বিচার না করে”–—এই যজ্ঞের আমি যোগ্য নই, যজ্ঞেশ্বর কেন আমার যজ্ঞ গ্রহণ করিবেন?

 রাধার এই মর্ম্মান্তিক কষ্টের এই দৃশ্য কি সখীরা সহিতে পারে?