পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১২২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১৬
পদাবলী-মাধুর্য্য

দানব-প্রকৃতির উপযোগী। আমরা বিশ্ব-প্রকৃতির অভিপ্রায় বুঝি আর না, বুঝি, এটুকু বিশ্বাস করিতে হইবে যে, সকলই সেই মঙ্গলময়ের বিধান—সুতরাং শুভান্ত। মানের পর মিলন না হইলে মান অসম্পূর্ণ, মাথুরের পর ভাব-সম্মেলন না হইলে মাথুর অসম্পূর্ণ। আমরা সমস্ত পথটা দেখিতে পাই না, কিন্তু পৌছাইবার যে একটা স্থান আছে—তাহা অন্তরে বুঝি। বিয়োগান্ত কথায় লোক রাস্তার এমন একটা জায়গায় পড়িয়া থাকে, যাহাতে মনে হয় পথ ফুরাইয়া গিয়াছে, কিন্তু পথ ফুরাইলে হৃদয়ের হাহাকার থাকিয়া যায় কেন, গম্যস্থানে গেলে কি আর ক্ষোভের কারণ থাকিতে পারে? বিয়োগান্ত রীতিটা গ্রীকগণ পছন্দ করিয়াছেন, তাঁহারা অশ্রু ও দীর্ঘ-নিঃশ্বাস ফেলিয়া—ফাঁসীতে প্রিয়জনকে ঝুলাইয়া আসর ছাড়িয়া উঠিবেন। হিন্দুর প্রাণ এই অবিশ্বাস ও অসোয়ান্তির রাজ্যের কথা দিয়া যবনিকা-পতন ইচ্ছা করেন না।

 তাঁহারা যদি দুঃখ বর্ণনা করিবেন, তবে তাহা কোন উন্নত আদর্শ লক্ষ্য করিয়া করেন। পিতৃসত্য রক্ষা করিবার জন্য রামের বনবাস, স্বামীপ্রেম দেখাইবার জন্য সাবিত্রী ও দময়ন্তীর কষ্ট বর্ণিত হইয়া থাকে। কিন্তু রাজকুমার শিশু-আর্থারের চক্ষু উৎপাটন বা শেষাঙ্কে হ্যামলেট-কর্ত্তৃক অকারন কতকগুলি মানুষ হত্যা—এই সকল বৃথা কষ্টের অবতারণা করিয়া শ্রোতার হৃদয়ে অহেতুক ব্যথা দেওয়া সংষ্কৃতের আলঙ্কারিকগণ নিষেধ করিয়াছেন।

 অভিসার ও মানের পর কৃষ্ণ রাধার সঙ্গে মিলিত হইয়াছেন। অভিসারে রাধা “দুই সখীর কাঁধে দুই ভুজ আরোপিয়া, বৃন্দাবনে প্রবেশিল শ্যাম-জয় দিয়া”“বৃন্দাবনে প্রবেশিয়া ধনী ইতি-উতি চায়, মাধবী তরুর মূলে দেখে শ্যাম রায়,”—গায়েন বলিতেছে, শ্যাম ধ্যান-ধরা যোগীর মত দাঁড়িয়ে আছে।