পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১৩০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১২৪
পদাবলী-মাধুর্য্য

করিতেছে। এই বিশ্বপ্রকৃতির রূপ লইয়া যুগলমূর্ত্তি সখিদিগের মন মুগ্ধ করিতেছে—

‘‘আজি হিরণ-কিরণ, আধ-বরণ আধ-নীলমণি জ্যোতি,
আধ-গলে বনমালা বিরাজিত, আধ-গলে গজমতি,
আধ-শিরে শোভে ময়ুর-শিখণ্ড, আধ-শিরে দোলে বেণী,
কনক-কমল করে ঝলমল ফণী উগারয়ে মণি,
আধই শ্রবণে মকর-কুণ্ডল, আধ রতন ছবি,
আধ-কপালে চাঁদের উদয়, আধ-কপালে রবি।
মন্দ পবন মলয় শীতল তাহে শ্রীঅঙ্গের বাস!
রসের সায়রে না জানি সাঁতার ডুবিল অনন্ত দাস।’’

 হেম-কান্তি ও নীলকান্তিতে, ময়ূরপুচ্ছ ও বেণীর লহরে আধ সিন্দূর বিন্দুর সঙ্গে আধ-কপালের চন্দনবিন্দুতে গজমতি হার ও বনমালায়—চিরপিপাসিত বহু কৃচ্ছ্র উত্তীর্ণ প্রকৃতি-পুরুষের আনন্দময় মিলন—এই চিত্র দেখিয়া কবি ভুলিয়া গিয়াছেন, তিনি লিখিয়াছেন, এ রস-সৌন্দর্য্য সমুদ্র পার হইবার সাধ্য তাঁহার নাই—কারণ তিনি সাঁতার জানেন না, এই জন্য ডুবিয়া গেলেন। এই চিত্র কি? মন্দিরে মন্দিরে আরতিকালে ধূপধূমচ্ছায়ার মন্দীভূত পঞ্চপ্রদীপের আলোকে রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্ত্তি লক্ষ্য করুন, তারপর বাহিরে চাহিয়া রৌদ্রকরোজ্জ্বল গগনে বনাস্তবীথিকার শিশিরবিন্দুতে ও নীলিম পল্লবে সেই মূর্ত্তির প্রভা দেখিতে পাইবেন। এই জগৎ সেই আনন্দময় প্রকৃতি-পুরুষের মিলন-দৃশ্য উদ্ঘাটিত করিয়া দেখাইতেছে। ইহা এ-পার ও পরপারের কথা একসঙ্গে মনে জাগাইবে।

 আমি পূর্ব্বেই বলিয়াছি, বৈষ্ণব কবিরা সাধারণের নিকট তাঁহাদের কাব্য এক হইতে দেন নাই; কেবলই মিষ্টরসে রসনায় জড়তা আসে—কেবলই সন্দেশ খাওয়া যায় না, মাঝে মাঝে মুখরোচক কিছু দিয়া স্বাদ