পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১৩৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
১২৭

তাঁহাকে ক্ষত-বিক্ষত করে। প্রেমিক তাঁহার এই আচরণে ব্যথিত হন।” এই গানটি অতি করুণ ও গদ্‌গদ কণ্ঠে সে গাহিয়া আসরে এমন একটি নির্ম্মল হাওয়ার সৃষ্টি করিল, যাহার পরে চন্দ্রাবতীকৃত অত্যাচারের কথা শ্রোতারা ভাবের সেই উচ্চগ্রাম হইতে শুনিল, কোন অশিষ্টভাব মনে হওয়া তো দূরের কথা—ভক্তির বন্যায় আসর ভাসিয়া গেল। শ্রোতারা নির্ব্বিকারচিত্তে শুনিতে লাগিল—“আহা বঁধু শুকায়েছে মুখ। কে ‍সাজাল হেন সাজে হেরি বাসি দুখ।”

 বস্তুতঃ বাঙালার নিম্নশ্রেণীর মধ্যে কত যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষা—ভক্তি ও প্রেমের গভীর জ্ঞান লুক্কায়িত আছে, তাহা কেমন করিয়া বুঝাইব? তাহাদের অসাধারণ ভক্তি-গঙ্গা-স্রোতে শ্লীল-অশ্লীল বহুমূল্য পণ্য-বোঝাই ডিঙ্গি ও গলিত শব একটানে ভাসিয়া যায়—প্রেমের সাগর-সঙ্গমে। সেই গঙ্গার পাবনী স্পর্শে পবিত্র ও অপবিত্রের মধ্যে ব্যবচ্ছেদ রেখা মুছিয়া যায়—সকলই দেবতার আশীর্ব্বাদ বহন করে।

 গোপীদের এই উপলক্ষে পরিহাস-সূচক অনেক পদ চণ্ডীদাস লিখিয়াছেন:—

‘‘নয়নের কাজর,   বয়ানে লেগেছে,
   কালোর উপরে কালো।
প্রভাতে উঠিয়া,   ও মুখ দেখিলু,
   দিন যাবে আজি ভালো।
অধরের তাম্বুল,   নয়নে লেগেছে,
   ঘুমে ঢুলু চুলু আঁখি;
আমা পানে চাও,   ফিরিয়া দাঁড়াও,
   নয়ন ভরিয়া দেখি।
চাঁচর কেশের   চিকুর বেণী
   সে কেন বুকের মাঝে।
সিন্দুরের দাগ,   আছে সর্ব্ব গায়
   মোরা হৈলে মরি লাজে।’’ ইত্যাদি—