আমার অনেক দিবসে, মনের মানসে
তোমা ধেনে মিলাইল বিধি।
মণি নও মাণিক নও যে হার করি গলায় পরি,
ফুল নও যে কেশের করি বেশ।
আমায় নারী না করিত বিধি তোমা হেন গুণনিধি
লইয়া ফিরিতাম দেশ দেশ।
তোমায় যখন পড়ে মনে, আমি চাই বৃন্দাবন পানে,
এলাইলে কেশ নাহি বাঁধি।
রন্ধন-শালাতে যাই, তুয়া বঁধু গুণ গাই,
ধোঁয়ার ছলনা করি কাঁদি।”
রামানন্দ রায়ের সুবিখ্যাত পদ “সো নহ রমণ, হাম নহ রমণী”টির যে লক্ষ্য—এই গানটি তাঁহারই বিবৃতি। নারী ও পুরুষের যৌন-সম্পর্ক ছাপাইয়া উঠিয়াছে, এই গীতিটি তাহার কামগন্ধহীন প্রেম-গৌরবে। এই যৌন-ভাবই আমার সঙ্গে তোমার মিলনের বাধা। তুমি পুরুষ, আমি নারী,—খুব কাছাকাছি-রূপে মিশিতে পারি না। যদি তাহা না হইয়া তুমি ফুল হইতে, তবে তোমায় মাথায় পরিতাম, মণি-মাণিক্য হইলে গলায় হার করিয়া পরিতাম—লোকনিন্দা আমাগিদকে ছুঁইতে পারিত না। অন্ততঃ আমি রমণী না হইয়া যদি পুরুষ হইতাম, তবে একদণ্ডও তোমাকে সঙ্গছাড়া করিতাম না, “লইয়া ফিরিতাম দেশ দেশ” কেহ নিন্দা করিতে পারিত না।
এই প্রেমে যৌনভাব আদৌ নাই—কেবল সঙ্গ-সুখের কামনা, বরং বাহিরের স্ত্রী-পুরুষ-রূপভেদ মিলনের বিঘ্ন ঘটাইতেছে! ইহারা এই দেশের লোক—যেখানে স্ত্রী নাই, পুরুষ নাই, আছে শুধু বিশুদ্ধ, লালসালেশহীন প্রেম এবং চিরমিলনের আকাঙ্ক্ষা; দেহটা একটা বাধা মাত্র।