পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১৪৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৪০
পদাবলী-মাধুর্য্য
১৪০

যো দরপণে পহুঁ নিজ মুখ চাহ,
হাম অঙ্গ জ্যোতি হইএ তছু মাহ।
যে বীজনে পহ বাঁজই গাত,
মঝু অঙ্গ তাহে হইএ মৃদু বাত।
যাঁহা পহুঁ ভরমহি জলধর শ্যাম।
মঝু অঙ্গ গগন হইএ তছু ‍ঠাম।” (গো)

 কানুর সঙ্গে মিলিত হইবার আশা মরণান্তেও তিনি ছাড়েন নাই। মরণের পরেও এই দেহ দিয়াই তাঁহার সেবা করিবেন—ইহাই তাঁহার কামনা। তাঁহার অরুণ পদ যে-পথে হাটিয়া যাইবে, আমার অঙ্গ যেন সেই পথের মাটী হইয়া থাকে। যে-সরোবরে তিনি নিতি নিতি স্নান করেন, আমি যেন তাহার সলিল হইয়া তদঙ্গ স্পর্শ লাভ করি। যে ব্যজনী তাঁহার অঙ্গে বাতাস দেয়, আমি যেন সেই ব্যজনী-সঞ্চালিত মৃদু বায়ু হইয়া তাহার সেবা করি। যে-মুকুরে তিনি তাঁহার মুখ দেখেন, আমি যেন সেই মুকুরের দীপ্তি হইয়া থাকি। যেখানে যেখানে তাঁহার মূর্ত্তি শ্যামল মেঘের মত উদিত হইবে, আমার অঙ্গ যেন সেখানে সেখানে সেই মেঘাবলম্বী আকাশে পরিণত হয়।

 অর্থাৎ আমার দেহের পঞ্চ উপাদান—ক্ষিত্যপতেজমরুদ্ব্যোমে—যেন মৃত্যুর পরেও সেবকের মত তাঁহাকে ভজনা করে!

 এই বৈষ্ণব গানটির অনুকরণে পরবর্ত্তী কালে শাক্ত কবি দাশরথি একটি গান রচনা করিয়াছিলেন, দুই-এর কতকটা এক ভাব, এক সুর।

  ‘‘দুর্গে কর এ দীনের উপায়,
  যেন পায়ে স্থান পায়।
আমার এ দেহ পঞ্চত্ব কালে, তব প্রিয় পঞ্চ স্থলে
  আমার পঞ্চভূত যেন মিশায়।
শ্রীমন্দিরে অন্তর-আকাশ যেন মিশায়, এ মৃত্তিকা যায় যেন তব মৃত্তিকায়,