পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য

 কিন্তু দৃঢ়সংকল্প-দ্বারা অসাধ্যসাধন হয়। ধীরে ধীরে মনের আবর্জ্জনা দূর হইতে থাকে। পৌষের কুয়াশা কাটিয়া গেলে প্রাতঃসূর্য্যোদয়ের মত ক্রমে ক্রমে নামের মহিমা প্রকাশ পায়। এইভাবে মন স্থিত হইলে, ইন্দ্রিয়-বিকার থামিয়া গেলে, নাম আনন্দের স্বরূপ হইয়া অপার্থিব-রাজ্যের বার্ত্তা বহন করে। নামের এই অপরূপ আস্বাদ কতদিনে মানুষ পাইতে পারে জানি না, ইহা সাধনা ও যুগ-যুগের তপস্যা-সাপেক্ষ।

 তখন নাম শোনা মাত্র উহা মর্ম্মে মর্ম্মে প্রবেশ করে, কাণ জুড়াইয়া যায়—প্রাণ জুড়াইয়া যায়। প্রেমিক তখন পৃথিবী ভুলিয়া নামের পোতাশ্রয়ে নঙ্গড় বাঁধেন। সেস্থান শুধু নিরাপদ্‌ ও নির্ব্বিঘ্ন নহে—তাহার মোহিনীতে মন মুগ্ধ হইয়া যায়।

“সই, কেবা শুনাইল শ্যাম-নাম।
কাণের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো—
আকুল করিল মোর প্রাণ।”

 কত তিলোত্তমা, কত রজনী, কত বিনোদিনী ও রাজ-লক্ষ্মীর প্রেমের কথা কবিরা আপনাদিগকে শুনাইয়াছেন, আপনারা সীতা-সাবিত্রী-দয়মন্তীর কথা শুনিয়াছেন;—কিন্তু এইরূপ না দেখিয়া নামের “বেড়াজালে” পড়িতে আর কাহাকেও দেখিয়াছেন কি? শুধু নাম শোনা নহে, নাম-জপ। “জপিতে জপিতে নাম অবশ করিল গো”—নাম জপ করিতে করিতে ইন্দ্রিয়গুলির সাড়া থামিয়া যায়—যেরূপ হাটের কলরব দূর হইতে শোনা যায়, কিন্তু হাটের মধ্যে আসিলে আর সে কলরব শোনা যায় না। জপ করিতে করিতে বহিরিন্দ্রিয়ের ক্রিয়া থামিয়া যায়—“অবশ করিল গো”-কথায় ইন্দ্রিয়াতীত অবস্থার কথাই আমি বুঝিয়াছি।