পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১৫৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৫০
পদাবলী-মাধুর্য্য

সখাসঙ্গচ্যূত ব্যাথায় ভরপুর, তাহাতে সময়ে সময়ে ভোগের একটা বাহ্য রূপ আছে, কিন্তু তাহার মূল সুর—ভগবৎ প্রেম। কবিরা নারদ ও তুমুবরুর মত আমাদিগকে কৃষ্ণ-কথাই শুনাইয়াছেন, এই প্রেমে দেহের তাপ বা উষ্ণত্ব নাই—জ্বর-বিকারগ্রস্থ আত্মার অতৃপ্ত পিপাসা নাই। উহা উর্ব্বশীর নৃত্য নহে—বেহুলার নৃত্য; উগ্র চাঁপা ফুলের গন্ধ নহে, বাহ্য শুভ্রতাভিমানী বিষাক্ত ধূন্তর পুষ্প নহে,—উহা স্নিগ্ধ সুরভিপূর্ণ সজল নলিনীদল। চণ্ডীদাসের পূর্ব্বরাগের চিত্রে রাধা প্রথম হইতেই নাম-জপের অধিকারিণী, তিনি মন্দিরের পূজারিণী—কুণ্ডলধারিণী, গেরুয়া পরিহিতা দুশ্চর্য্য তপস্যাশীলা আত্মহারা যোগিনী। তাঁহাকে বিশ্বের চতুর্দ্দিক হইতে কৃষ্ণবর্ণের আবেষ্টনী ভগবৎরূপের ধাঁধাঁ দেখাইতেছে। এই কৃষ্ণ-বর্ণের খেলা তিনি যেখানে দেখিতেছেন, সেইখানেই ভগবৎ সত্ত্বা উপলব্ধি করিয়া প্রণাম করিতেছেন। এই ধ্যানশীলা, কেশ-পাশ বেশ-ভূষার প্রতি উদাসীনা, ক্ষণে ক্ষণে প্রিয়ের আগমনের ভ্রান্তিতে চমৎকৃতা রাধিকাকে দেখিয়া সখীরা বলিতেছেন, ইঁহাকে কোথায় কোন্‌ দেবতা আশ্রয় করিয়াছে? ‍(“কোথা বা কোন্ দেব পাইল”)। সত্যই তাঁহাকে কোনো দেবতা পাইয়াছেন, মানুষ আর তাঁহার নাগাল পাইবে না। তিনি সখিগণের সঙ্গে ক্ষণকাল দাঁড়াইয়া কথা বলিতে পারেন না—

‘‘দাঁড়াই যদি সখিগণ সঙ্গে,
পুলকে ভরয় তনু শ্যাম পর-সঙ্গে। (প্রসঙ্গে)
পুলক ঢাকিতে নানা করি পরকার (প্রকার),
নয়নের ধারা মোর বহে অনিবার।”

 এই রাধার সুখ-দুঃখ মর্ত্ত্যের সুখ-দুঃখ নহে, তাহা অমর-ধামের সুখ-দুঃখ।

 কিন্তু বিদ্যাপতির সব খানিই শুধু কবিত্ব বা অলঙ্কার-শাস্ত্রের