পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১২
পদাবলী-মাধুর্য্য

 কবি বলিতেছেন:—

“যেখানে বসতি তার  সেখানে থাকিয়া গো
যুবতীধরম কৈছে রয়?”

যে সকল কথা কাণে বাধে, তাহা অকুণ্ঠিতভাবে কবি বলিয়া গিয়াছেন, কারণ তাঁহার দৃষ্টি অন্তর্ম্মুখী,—

“কহে দ্বিজ চণ্ডীদাস,  কুলবতী কুলনাশে
যুবতীর যৌবন যাচায়।”

 এই শুদ্ধ অপাপ-বিদ্ধ কৃষ্ণ প্রেম—ইহা যাহার মনে জন্মিয়াছে, পদ্মার ঢেউএ যেরূপ কুল ভাঙ্গিয়া পড়ে, তাহারও তো কুল সেইরূপ ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে। কুল-গর্ব্ব, জাতি-গর্ব্ব, পদ-গর্ব্ব, এই সকল তো মত্ত হস্তীর ন্যায় আমার মনের দুয়ারে বাঁধা ছিল—

“দম্ভ-শালে মত্ত হাতী, বাঁধা ছিল দিবা রাতি”

আজ ইহাদের সকলেরই ছুটি; আমি অবরোধে ধৈর্য্য ও আত্ম-সংযম পণ করিয়া বসিয়াছিলাম, আজ সে “ধৈর্য্য-শালা হেমাগার” ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে, আমি কিছুতেই নিজকে সামলাইতে পারিতেছি না। আমি তাঁহাকে দেখিয়াছি এবং আমার সমস্ত তাঁহাকে নিবেদন করিয়া দিয়াছি। স্ত্রীলোককে তাহার লজ্জারূপ শাড়ী আবরণ করিয়া রাখে—প্রাণ যায় তবু লজ্জা ছাড়িতে পারে না, কিন্তু আজ আমি উপযাচক হইয়া আমার দেহ, মন, যৌবন ও লজ্জা তাঁহার চরণে ডালি দিয়াছি: “যুবতীর যৌবন যাচায়।” চণ্ডীদাস আর একস্থানে বলিয়াছেন, “কানুর পীরিতি—জাতিকুল-শীল ছাড়া।” সে রাজ্যে ব্রাহ্মণ-শূদ্র, কুলীন-অকুলীন নাই; “শীল”, আচার-বিচারের নিয়ম নাই।

 আমি এই পদের অর্থ যেরূপ বুঝিয়াছি, তাহাই লিখিলাম। কিন্তু যিনি অন্যরূপ বুঝিবেন, তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করি, শুধু নাম শুনিয়া বিহ্বল হয়, পাগলা-গারদ ছাড়া এরূপ লোক কোথায়ও কি পাওয়া যায়? আর