পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/২৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
১৭

 বাঁশীর সুরে সংসার টুটিয়া পড়িতেছে। আনন্দময়ের আনন্দের আহ্বান, যে একবার শুনিয়াছে, সে ঘর করিবে কিরূপে?

“অন্তরে কুটিল বাঁশী, বাহিরে সরল।
পিবই অধর-সুধা উগারে গরল।” (চ)

 বাঁশী কৃষ্ণ-মুখামৃত পান করিয়া বিষ-উদ্গীরণ করিতেছে—সংসার হইতে আমাকে টানিয়া বাহির করিতেছে। এই ব্রজপুরে তো আরও অনেক রমণী আছে, কিন্তু বাঁশী কেন শুধু ‘রাধা’ ‘রাধা’ বলিয়া আমাকেই ডাকে?

“ব্রজে কত নারী আছে, তারা কে না পড়িল বাঁধা।
নিরমল কুলখানি  যতনে রেখেছি আমি,
 বাঁশী কেন বলে “রাধা-রাধা”! (চ)

শুধু আমারই নাম ধরিয়া ডাকে, আমার কুল—রাজার মেয়ে আমি, আমার যে আকাশ-স্পর্শী উচ্চ কুল, আর তো তাহা থাকে না।

 চারিদিকে আনন্দের ডাক পড়িয়াছে—সে ডাক নামের একটা “বেড়া-জালে”র সৃষ্টি করিয়াছে, মন-শফরী সেই জালে পড়িয়াছে। ডাহিনে, বামে, সম্মুখে, পশ্চাতে শুনিতেছি ‘রাধা’, ‘রাধা’। কে যেন আনন্দের বেড়া-জাল আমাকে দিয়া ঘিরিয়াছে, আমি পলাইতে পথে পাইতেছি না।

 এই বাঁশীর সুরের কথা শত শত পল্লী-গীতিকায় আছে, বাঙ্গলা দেশের মেঠো হাওয়ায়—সুরের আকাশে তাহা প্রতিধ্বনির মত অবিরত ধ্বনিত হইতেছে। মাঝি নৌকা বাহিরে বাহিরে দূর সিকতা-ভূমি হইতে তাহা শুনিয়া বৈঠা-হাতে মুগ্ধ হইয়া দাঁড়ায়। কিন্তু চণ্ডীদাসের কবিতায় উহা উর্দ্ধলোকের সংবাদ। এই সংসারের সাজানো বাগান ভাঙ্গিয়া—শত রাগ-রাগিণীর অন্ধি-সন্ধি, তাল-মানের কার্‌তপ এড়াইয়া উহা সুরের