পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৩২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৬
পদাবলী-মাধুর্য্য

 রাধিকার এই ধ্যানাগারের নিস্তব্ধতায় অপর সকলের প্রবেশ নিষেধ। এখানে চাঁপা ফুলের মালা খুলিয়া ফেলিয়া তিনি স্বীয় নিবিড় আলুলায়িত কুন্তলের বর্ণশোভা দেখিতেছেন, সেই শোভায় আবিষ্ট হইয়া পড়িয়াছেন—“না চলে নয়নের তারা।” নবোদিত কৃষ্ণমেঘের স্নিগ্ধ বর্ণে কাহার দেহ-প্রভা দেখিয়া মুহুর্মুহু চক্ষু অশ্রুসিক্ত হইতেছে, এবং একদৃষ্টে ময়ূর-ময়ূরীর নীলমণি-খচিত কণ্ঠে কাহার বর্ণাভাসের সন্ধান করিতেছেন? এই অনধিগম্য ধ্যানের কক্ষে চণ্ডীদাস প্রবেশ করিয়া রাধার যে চিত্রটি আঁকিয়াছেন, তাহা এইরূপ:—

“রাধার কি হৈল অন্তর-ব্যথা,
   সে যে বসিয়া একলে থাকয়ে বিরলে
   না শুনে কাহার কথা।
এলাইয়া বেণী, ফুলের গাঁথুনি, খসায়ে দেখয়ে চুলে।
আকুল নয়নে, চাহে মেঘপানে, কি কহে দু’হাতে তুলে॥
বিরতি আহারে—রাঙ্গা বাস পরে, যেমন যোগিনী পারা।
সদাই ধেয়ানে চাহে মেঘ পানে, না চলে নয়নের তারা॥
এক দিঠি করি, ময়ূরময়ূরী, কণ্ঠ করে নিরীক্ষণে।
চণ্ডীদাস কয় নব পরিচয়, কালিয়া বঁধুর সনে।”

 ইহার পর:—

“সদাই চঞ্চল, বসন অঞ্চল সম্বরণ নাহি করে।
বসি থাকি থাকি, উঠয়ে চমকি–ভূষণ খসিয়া পড়ে।” (চ)

কাহার বাঁশীর সুরের আভাষ শুনিয়া, কাহার নূপুর-সিঞ্জিত পদ-স্পর্শের পুলকে, জগতের প্রতি রেণুতে রেণুতে বিম্বিত কাহার কৃষ্ণবর্ণের মাধুরিমা লক্ষ্য করিয়া রাধিকা চমকিত হইয়া উঠিতেছেন! চঞ্চল শাড়ীর অঞ্চল শরীর-মুক্ত হইয়া মাটিতে লুটাইতেছে এবং ভূষণ খসিয়া পড়িতেছে, তিনি তাহা সংবরণ করিতে পারিতেছেন না। এই উন্মাদভাব লক্ষ্য