পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৩৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩০
পদাবলী-মাধুর্য্য

জোড় হস্তে, যিনি তাঁহার সর্ব্বনাশ করিতেছেন—ছন্ন-ছাড়া, গৃহ-হারা করিতেছেন, তাঁহাকেই ডাকিয়া বলিতেছেন, “আমার রাজার কুল রাখ, আমার চিরপ্রতিষ্ঠ সতীত্বের গৌরব রাখ, সিংহদ্বারের মত অজেয় আমার ধৈর্য্য ও সংযম রক্ষা কর, আমার কুল-মান রাখ, এই আকাশ-স্পর্শী সামাজিক প্রতিষ্ঠার অট্টালিকা রাখ,—আমার বড় সাধের গৃহস্থালী রাখ।” নাম-দস্যু তাহা শুনিল না,—সমস্ত দর্প, অভিমান, রমণীর সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ভূষণ, লোকলজ্জা ও ধৈর্য্য ভাঙ্গিয়া চুরিয়া চুলের মুটি ধরিয়া রাধাকে বাহিল করিল। তখন কোথায় গেল কপিলাবস্তুর রাজপ্রাসাদ, কোথায় গেল উত্তর-কোশলের রাজধানী অযোধ্যা, কোথায় গেল নদীয়ার শচী-মায়ের স্নেহ-নীড় ও বিষ্ণুপ্রিয়ার প্রেমকুঞ্জ, শ্রীখেতুবীর রাজপুরী—মুণ্ডিত মস্তক, করঙ্ক-হস্ত, যজ্ঞ-সূত্রহীন, শিখাশূন্য, সংসারের সর্ব্ব-সংস্কার-মুক্ত এক অপাপ-বিদ্ধ, অনবদ্য মূর্ত্তি বাহির হইল, ঘরের বাহির হইবার পূর্ব্বে রাধা একবার সখীদের মুখের দিকে চাহিয়া বলিয়াছিলেন,

“আছে শুধু প্রাণ বাকি—
তাও বুঝি যায় সখি,
কি করব কহবি উপায়?” (শ্যা)

‘আমার সাংসারিক জীবনের অবসান হইয়াছে, প্রাণ আছে, কিন্তু তাহা সাংসারিক সুখ-দুঃখে আর সাড়া দেয় না।’ সখীরা বলিতেছেন—শ্যাম একবার যাঁহাকে ধরেন, তাঁহাকে ছাড়েন না, তুমি তাঁর পায় ধরিয়া বল “আমায় নিও না”

“শ্যামানন্দ দাসে কয়  শ্যাম তো ছাড়িবার নয়
পার যদি ধর গিয়া পায়।”

রাধা তখন কৃষ্ণের পায়ে ধরিলেন,—সেই চরণ-কমলই পাইলেন, আর কিছু পাইলেন না। তখন “সকলই পাইয়াছি”, বলিয়া সেই চরণ-কমল শিরোধার্য্য করিয়া লইলেন।