পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৪৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩৮
পদাবলী-মাধুর্য্য

তিনি এত বড় দুটো অর্জ্জুন গাছের সঙ্গে তো দড়ি দিয়া শিশুটিকে বাঁধিয়া গেলেন, কিন্তু যখন সে দুটো গাছ তোর ঘাড়ে পড়িল, তখন নন্দরাণী কোথায় ছিলেন—আমরাই তো তোকে আসিয়া বাঁচাইয়াছিলাম।”

 এই তর্ক-বিতর্কে মা যশোদার আঙ্গিনা মুখরিত হইয়া উঠিল। সখারা কাঁদিয়া বিভোর হইতেছে, রাণীকে বলিতেছে—“আমরা তোমার গোপালকে চারিদিকে ঘিরিয়া থাকি, ‘সকল রাখাল মিলি, মাঝে থাকে বনমালী’, কানুর পায়ে একটি কুশাঙ্কুর ফুটিলে আমাদের প্রাণে বিঁধে।” তাহারা যশোদাকে অনেক অনুনয় বিনয় করিল—কৃষ্ণের দিকে চাহিয়া সজল চক্ষে বলিল, আমাদের মত “বিনি কড়িতে হেন নফর কোথা পাবি?” সে সকল উচ্ছ্বসিত আবেদন নিবেদনে যশোদার মন কতকটা গলিয়া গেল। তিনি কৃষ্ণকে সাজাইতে বসিলেন—বিবিধ অলঙ্কারে কৃষ্ণের অঙ্গ ঝল্‌মল্‌ করিতে লাগিল, কৌটা খুলিয়া অলকা-তিলকা পরাইলেন, চন্দনের ফোঁটায় যেন “কপালে চাঁদের উদয়” হইল। সমস্ত দেবতাকে ডাকিয়া রাণী কানুকে কাননে রক্ষা করিবার জন্য প্রার্থনা করিতে লাগিলেন।

 এইবার সখাদের সঙ্গে কৃষ্ণ গোষ্ঠে বাহির হইবেন। রাণী কানুর পায়ে নূপুর পরাইতে পরাইতে ভাবাবেশে সাশ্রুনেত্র হইলেন; কিন্তু পায়ে আল্‌তা পরাইবার সময়ে আর নিজকে সামলাইতে পারিলেন না, তখন কাঁদিয়া বিবসা পাগলিনীর ন্যায় রাণী আঙ্গিনায় বসিয়া পড়িলেন এবং বলিলেন—“আমি কিছুতেই আজ গোপালকে গোষ্ঠে যাইতে দিব না। তোরা যদি জোর করবি, তবে মাতৃবধের দায়িক হবি।”

 সখারা মাথায় হাত দিয়া বসিয়া পড়িল।

 এই সময়ে তাহাদিগের মনে নূতন আশায় সঞ্চার করিয়া আকাশে বলরামের শিঙা বাজিয়া উঠিল। দাদা বলাই আসিতেছেন, সুতরাং