পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৬৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৮
পদাবলী-মাধুর্য্য

ভাসিয়াছি। গুরুজন আমায় কটূক্তি করেন, তা করিবেনই তো, তাঁদের দোষ কি? সে কটূক্তি আমার পক্ষে চুয়া-চন্দন, আমি কানু-অনুরাগে দেহ মন তাঁহাকে নিবেদন করিয়া দিয়াছি।

 প্রতিবাসীরা নিন্দা করে, করুক—আমি তাহাদের পাড়ায় যাইব না। চণ্ডীদাস বলিতেছেন, সে কানুপ্রেমে পড়িয়াছে, তাহার জাতি-কুল-শীল সব গিয়াছে।

 এই পদটি খুব উচ্চাঙ্গের, কৃষ্ণ প্রেমিকের ধর্ম্ম-কর্ম্ম কিছু থাকে না। চণ্ডীদাসের আর একটি পদে আছে—

“মরম না জানে ধরম বাখানে, এমন আছয়ে যারা।
কাজ নাই সখি, তাদের কথায়, বাহিরে রহন তারা।
আমার বাহির দুয়ারে কপাট লেগেছে,
ভিতর দুয়ার খোলা।”

 যিনি ঈপ্সিতকে পাইয়াছেন,—তাহার বহিরিন্দ্রিয়ের খেলা থামিয়া গিয়াছে। মোহনা পর্য্যন্ত ডাক-হাক, কিন্তু নদী যখন সমুদ্রে পড়িয়াছে—তখন তাহার রব সমুদ্রের রবে মিশিয়া গিয়াছে। তাহার ক্ষুদ্র অস্তিত্ব দিগন্তপ্রসারী বিশাল জলধারার অস্তিত্বে মিশিয়াছে, তখন তাঁহার গতি থামিয়াছে—কর্ম্ম সমাপ্ত হইয়াছে, ভাল-মন্দের এ-পথ ও-পথের বিচার চলিয়া গিয়াছে। তখন—“কি আর শিখাও—ধরম-করম” এবং তখন “কহে চণ্ডীদাস পাপ-পুণ্য সম, তোমার চরণ মানি।” পাপ-পুণ্যে ভেদ নাই, তোমার চরণপদ্মই আমার সব।

“কানু অনুরাগে এ দেহ সঁপেছি, তিল-তুলসী দিয়া”,

তিল-তুলসী দিয়া যে দান হয়—তাহা ফিরিয়া লইবার আর অধিকার থাকে না। রাধা সেই ভাবে তাঁহার দেহ কৃষ্ণকে সমর্পণ করিয়াছেন, দেহ এই ভাবে নিবেদিত হইলে কর্ণ কেবল তাঁহারই প্রিয়