পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৬৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬০
পদাবলী-মাধুর্য্য

 কাহার জন্য প্রত্যুষে উঠিয়া সদ্যস্নাতা রাধা মালার জন্য পুষ্পকুঞ্জে ফুল কুড়াইবেন? কাহার শ্রীমুখ অলকা-তিলকা দিয়া সাজাইবেন? চন্দন ঘষিয়া কপালে বিন্দু আঁকিয়া দিবেন? কাহার জন্য ফল-ফুলের নৈবেদ্য তৈরী করিবেন? কাহার জন্য সদ্যবিকশিত শতদলের প্রতিটি দল লইয়া সযত্নে পুষ্পশয্যা তৈরী করিবেন? মিলনপর্ব্ব শেষ হইয়া গিয়াছে। মন্দির ভাঙ্গিয়া গিয়াছে—বিগ্রহ অপহৃত হইয়াছে।

 এমন যে হইবে, কে জানিত?

“আমারে ছাড়িয়া পিয়া,   মধুরায় রইল গিয়া—
  এও বিধি লিখিলা করমে।”

 আমার কর্ম্মে—আমার ভাগ্যে ইহাও লেখা ছিল, আমি কৃষ্ণ-হারা হইয়া বাঁচিয়া থাকিব?

 বিদ্যাপতি মাথুরের প্রথম অধ্যায়ে ভগবদ্ভাবে আবিষ্ট হইয়া লিখিয়াছেন,

‘‘হরি হরি কি ইহ দৈব দুরাশা।

সিন্ধুর নিকটে যদি কণ্ঠ শুকায়ব, কো দূর করব পিপাসা?
চন্দনতরু যব সৌরভ ছোড়ব, শশধর বরখিব আগি।
চিন্তামণি যদি নিজ গুণ ছোড়ব কি মোর করম অভাগী।
শাওন মাহ ঘন, যব বিন্দু না বরখব, সুরতরু বাঁঝ কি ছাদে।
গিরিধর সেবি, ঠাম নাহি পাওব, বিদ্যাপতি রহ ধন্দে।’’

 এখানে একটু ঐশ্বর্য্যের ভাব আছে—তিনি এই বিরাট্‌, তাঁহার কাছে আসিয়া বঞ্চিত হইতে হইবে, এমন তো কখনও ভাবি নাই। এই সুললিত শব্দে গ্রথিত কাব্যরসপূর্ণ পদটির মধ্যে যেন একটু

‘‘যাচঞা মোঘা বরমধিগুণে নাধমে লব্ধ কামা’’

গন্ধ পাওয়া যায়। যিনি সিন্ধুর মত বিরাট্ তাঁহার কাছে বিন্দু পাইব না, এই আক্ষেপে দেখা যায়, রাধা যেন কৃষ্ণ-প্রেমের কণিকা