পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৭৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭১
পদাবলী-মাধুর্য্য
৭১

তাহারা একথা বলিল না যে, কৃষ্ণ চিরদিনের জন্য বৃন্দাবন ছাড়িয়া গিয়াছেন, বিদ্যাপতির রাধা বলিলেন,

‘‘যব হরি আওব গোকুল-পুর
ঘরে ঘরে নগরে বাজব জয়-তুর।’’

বৃন্দাবনে তিনি ফিরিয়া আসিবেন, রাধা নিজের হৃদয়ে তাহার পূর্ব্বাভাস উপলব্ধি করিয়াছেন। এবার বিজয়-বাজনা (জয়-তুর) বাজাইয়া তাঁহাকে বরণ করিবার সময় হইয়াছে। কিন্তু এবার সমস্ত আয়োজনসম্ভার মানসীপূজার উপকরণ।

‘‘পিয়া যব আয়ব এ মঝু-গেহে,
মঙ্গল আচার করব নিজ দেহে।’’

 তিনি আসিবেন, কিন্তু বর্হিদ্বার দিয়া আসিবেন না,—এই দেহই শ্রীমন্দির হইবে, “human body is the highest temple of God”. মঙ্গলাচরণ সমস্তই দেহে করিতে হইবে। বিদেহী, চিন্ময় কৃষ্ণ হৃদয়ে আসিতেছন,

‘‘বেদী করব হাম আপন অঙ্গমে।
ঝাড়ু করব তাহে চিকুর বিছানে।’’

আমার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়া তাঁহার বেদী রচনা করিব এবং আমার আলুলায়িত কুন্তল দিয়া সম্মার্জ্জনী তৈরী করিয়া তাঁহার পথ পরিষ্কার করিব। আর,

‘‘আলিপনা দেয়ব মতিম হার,
মঙ্গল-কলস করব কুচভার।’’

আমার কণ্ঠ-বিলম্বিত সুদীর্ঘ মুক্তার হারই আলিপনা-স্বরূপ হইবে, বাহিরের আঙ্গিনায় আলিপনা দেওয়ার প্রয়োজন নাই। বহির্দ্বারে তাঁহার সম্বর্দ্ধনার্থ মঙ্গল-ঘট স্থাপন করার দরকার নাই, আমার স্তন-যুগ্মই মঙ্গল-ঘট স্বরূপ হইবে।