পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য

 আমি ইহাও পূর্ব্ব হইতে বৈষ্ণব-পদের অনুরাগী হইয়াছিলাম আমার অষ্টম বৎসর বয়সে একদিন এক বৃদ্ধ বৈরাগী তাঁহার পাঁচ বৎসর বয়স্ক শিশু পুত্রকে কৃষ্ণ সাজাইয়া একতারা বাজাইয়া মিলিত-কণ্ঠে

“যদি বল শ্যাম হেঁটে যেতে চরণ ধূলায় ধূসর হবে,
গোপীগণের নয়নজলে চরণ পাখালিবে।”

গাহিতেছিল, সেই আমার প্রথম মনোহরসাই গান শোনা। আমার মনে হইয়াছিল, স্বর্গের হাওয়া আসিয়া আমার বুক জুড়াইয়া গেল;—কেহ যেন এক মুঠো সোণা দিয়া আমাকে আশীষ করিয়া বলিয়া গেল, “এই তোকে রত্নের সন্ধান দিয়া গেলাম।”

 এই ঘটনার কিছুদিন পরে মাণিকগঞ্জের বাজারের অনতিদূরে দাসোরার খালের কাছে এক চতুর্দ্দশ বৎসর-বয়স্কা রমণী গাহিতেছিল—

“কত কেঁদে মর্‌বি লো তুই শ্যাম অনুরাগে—
নব-জলধররূপ বড় মনে লাগে—
ভেবেছিলি যাবে দিন তোর সোহাগে সোহাগে”—

একটা খোলা জায়গায় বাজারের লোকেরা সতরঞ্চি পাতিয়া আসর তৈয়ারী করিয়া দিয়াছিল; বহু শ্রোতা—কেহ দাঁড়াইয়া, কেহ বসিয়া গান শুনিতেছিল। আমার সেই আট বৎসর বয়সের কথা এখনও মনে আছে। রমণীর বর্ণ গাঢ় কৃষ্ণ, তদপেক্ষা গাঢ়তর কৃষ্ণ কোঁকড়ান কুন্তল পুঞ্জ পুঞ্জ ভ্রমরের মত তাহার পৃষ্ঠে ও কর্ণান্তে দুলিতেছিল,—সেই কৃষ্ণবর্ণের মধ্যে একটা লাবণ্য ও তাহার সুরে একটা আপনা-ভোলা আবেশ ছিল, তাহা আমি এখনও ভুলিতে পারি নাই—কালেংড়া রাগিণীর চূড়ান্ত মিষ্টত্ব দিয়া সে গাইতেছিল “ভেবেছিলি যাবে দিন তোর সোহাগে—সোহাগে”—এখনও সেই নীল-বরণী নবীনা রমণীর কণ্ঠস্বরের রেশ কখনও কখনও আমার কানে বাজিয়া ওঠে। সে আজ