পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৮৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
৭৯

তোমার নামের সঙ্গে আমার কলঙ্ক-কথার যোগে আমি গৌরব অনুভব করি। আমি সতী হই বা অসতী হই, তুমিই জান, আমি লোক-চর্চ্চা গ্রাহ্য করি না। আমি কি মন্দ, কি ভাল তাহা জানি না; আমার পাপ পুণ্য, ধর্ম্মাধর্ম্ম সকলই তোমার যুগল পাদপদ্ম।” পরমহংস দেবও ইহার উপরে কিছু বলেন নাই:—

বঁধু, তুমি সে আমার প্রাণ,

দেহ মন আদি, তোহারে সঁপেছি, জাতি-কুল-শীল-মান,
অখিলের নাথ, তুমি হে কালিয়া, যোগীর আরাধ্য ধন,
গোপ-গোয়ালিনী, হাম অতি দীনা, না জানি ভজন-পূজন।
কলঙ্কী বলিয়া ডাকে সব লোকে, তাহাতে নাহিক দুখ,
বঁধু, তোমার লাগিয়া কলঙ্কের হার গলায় পরিতে সুখ।
পীরিতি রসেতে ঢালি’ তনু মন, দিয়াছি তোমার পায়।
তুমি মোর গতি, তুমি মোর পতি, মন নাহি আন ভার।
সতী বা অসতী তোমাতে বিদিত, ভাল মন্দ নাহি জানি,
কহে চণ্ডীদাস পাপপুণ্য মম তোমার চরণ মানি।”

 নিরিবিলি কৃষ্ণকে পাইয়া তিনি কত কথাই না বলিতেছেন,—তাহার প্রতিটি শব্দ, জীবনের অনন্ত দুঃখ, সখা-সঙ্গের অনন্ত আনন্দ কত মধুরাক্ষরা কথায়, কত মর্ম্মান্তিক কারুণ্যপূর্ণ অশ্রুধারায় ব্যক্ত হইতেছে। তিনি বলিতেছেন: “বঁধু, তোমায় আমি আর কি বলিব, তোমাকে আজ যেমন করিয়া পাইয়াছি, সেই প্রাণপতিরূপে যেন তোমার এই মহা অবদান—এই মানবজন্ম ফুরাইয়া না যায়। জীবনের প্রতি অঙ্কে, রস-রূপে, আনন্দময়-রূপে, বিধানকর্ত্তা-রূপে, স্নেহে-প্রেমে-সখ্যে—রক্ষক-রূপে—পালক-রূপে যেন সর্ব্বদা তোমাকে পাই, জীবনের সঙ্গি-স্বরূপ যেন তুমি প্রতি মুহূর্ত্ত আমার কাছে থে’ক এবং মৃত্যুকালে যেন তোমার মূর্ত্তি আমার ঊর্দ্ধগত নেত্র কণীনিকায় উজ্জ্বল হইয়া উঠে। জীবনে-মরণে